উত্তেজনা কমাতে ভারত ও চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় আর সেনা পাঠাবে না
ভারত ও চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) আর কোনও সেনা না পাঠাতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশের সিনিয়র সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে ১৪ ঘণ্টার বৈঠকের পর মঙ্গলবার রাতে ভারত ও চীন একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত (সোমবার)লাদাখে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চীনা অংশের মলডোতে ভারত ও চীনের সেনা কমান্ডার স্তরে সংলাপ হয়। ওই বৈঠক প্রায় ১৪ ঘন্টা ধরে চলে। বৈঠকটি শেষ হওয়ার ২২ ঘন্টা পরে দু'দেশই এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘উভয়পক্ষই ফ্রন্টলাইনে আরও সেনা না পাঠাতে সম্মত হয়েছে’ এবং এলএসি’তে ‘একতরফাভাবে পরিস্থিতি পরিবর্তন থেকে বিরত থাকবে।’ দু'দেশই এমন কোনও পদক্ষেপ নেবে না যাতে এলএসি’র পরিস্থিতি জটিল হয়। এবং 'ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল সিদ্ধান্ত থেকে' এড়িয়ে চলবে।
যদিও গোলযোগপূর্ণ লাদাখে এপ্রিল মাসের আগেকার অবস্থা ফিরবে কি না, আগেকার মতো ফের নিজেদের এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী টহল দিতে পারবে কি না, ভারতীয় এলাকা থেকে চীনা সেনা কবে সরে যাবে সে সব নিয়ে বিবৃতিতে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফিঙ্গার চার থেকে আট পর্যন্ত টহল দিয়েছে ভারতীয় সেনা জওয়ানরা। গণমাধ্যমে প্রকাশ, ওই এলাকা এখন চীনা বাহিনীর দখলে। প্যাংগং লেকের চার থেকে আট নম্বর ফিঙ্গার এলাকা চীন নিজেদের দখলে নিয়েছে, গালওয়ান উপত্যকায় জমি দখল করে নির্মাণ কাজ করেছে, সেখান থেকে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে চীনা কর্তৃপক্ষ নীরব রয়েছে। এরফলে পূর্বাবস্থা ফিরবে কি না, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
সীমান্ত সমস্যা মেটাতে ভারত ও চীনা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে এনিয়ে ৬ বার বৈঠক হল। খুব শিগগিরি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭ম পর্যায়ের বৈঠক হবে। ভারত-চীন ষষ্ঠ বৈঠকের বিশেষ তাৎপর্য হল, ওই বৈঠকে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পূর্ব এশিয়া) নবীন শ্রীবাস্তব। সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরেন্দ্র সিংহ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জে কে মেনন। এভাবে আমলা ও সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সামরিক স্তরের বৈঠকের মধ্যে সাধারণভাবে কখনও কূটনৈতিক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন না। সাধারণত বৈদেশিক কোনও সঙ্কটে হয় একেবারেই কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক হয়। অথবা সমান্তরালভাবে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সংলাপ হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০ সেপ্টেম্বর মস্কোয় ভারত-চীন দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বৈঠকে যে পাঁচ দফা ঐকমত্য হয়,তাতে একইসঙ্গে রাজনৈতিক ও সামরিক, এই দুই স্তরে বোঝাপড়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকার অবশ্য সতর্কতা বজায় রাখতে চাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, আগামী কয়েকদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনা কতটা বাস্তবায়িত হয়, তা আগামী কয়েক দিনেই বোঝা যাবে। বিবৃতিতেও এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, খুব দ্রুত সপ্তম দফা সামরিক পর্যায়ের বৈঠকে বসবে দু’দেশ। সেখানে সমস্যা সমাধানে প্রকৃতপক্ষে কতটা কাজ এগিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে। যৌথভাবে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রশ্নে ভারত-চীন উভয়েই সক্রিয় হবে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।