আপাদমস্তক মুসলিমবিরোধী বিজেপির অসমে কোনো স্থান নেই: আজমল

‘ভারতের অসম বিভিন্ন ভাষাভাষী এবং সম্প্রদায়ের মিলনভূমি, এখানে বিজেপি’র কোনো স্থান নেই’ এ মন্তব্য করেছেন এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল। অসমের সাম্ভাব্য রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বদরউদ্দিন আজমল সদ্য অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু ফল হবে বলে দাবি করেছেন। তিনি সম্ভাব্য ফলের ভিত্তিতে রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতে সমস্ত সেক্যুলার দলকে নিয়ে তৃতীয় মোর্চা গঠনের পক্ষে জোরালো সাফাই দিয়েছেন। প্রস্তাবিত তৃতীয় মোর্চায় এআইইউডিএফ–এর পাশাপাশি সেখানে অগপ এবং বিপিএফের মতো দল শামিল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। এই মোর্চায় কংগ্রেসকেও রাখার পক্ষপাতি তিনি।

আজমল বলেন, ‘এসব দলকে তৃতীয় মোর্চা গড়ার জন্য একজোট হওয়া উচিত, কারণ সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে বাইরে রাখতে অসম এবং অসমবাসীকে বাঁচাতে এটাই একমাত্র পথ।’ তার দাবি, এআইইউডিএফ ত্রিশের বেশি আসনে জয়ী হয়ে রাজ্যে সরকার গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজমল বলেন, আমাদের ছাড়া কোনো দলই অসমে সরকার গড়তে পারবে না এবং এআইইউডিএফ-এর গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।’

আজমল বলেন, ‘কংগ্রেস যদি নিজের শক্তিতে ক্ষমতা দখল করার অবস্থায় না থাকে তাহলে আমরা মুখ্যমন্ত্রী পদে অগপ’র প্রফুল্ল মহন্তকে সমর্থন জানাব। আমি তাকে উপযুক্ত বলে মনে করি। কারণ, এই মুহূর্তে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি।’

তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা রাখেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে আজমল বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার খোয়াব দেখছি না। এই পদের জন্য আমার পছন্দ অগপ’র প্রফুল্ল কুমার মহন্ত। এটাই সঠিক বিকল্প। আমরা তাদের সঙ্গে ১০ বছর ধরে কাজ করেছি। তাদের সঙ্গে আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো, তারা সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব দিয়েছে।’

মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল এভাবে অগপ’র প্রফুল্ল কুমার মহন্তকে কেন্দ্র করে মোক্ষম রাজনৈতিক চাল দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অগপ যদিও বিজেপি’র সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে লড়েছে। এক্ষেত্রে একদিকে, বিজেপি জোট ভেঙে তাদের দুর্বল করার চেষ্টা, অন্যদিকে, অগপকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের মধ্যে রাখার কৌশল নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু কেন বিজেপি জোট ছেড়ে তৃতীয় মোর্চায় যোগ দেবে অগপ? এই প্রশ্নের জবাবে আজমল খানিকটা দার্শনিক ভঙ্গিমায় বলেন, ‘এটা তাদের পক্ষে খানিকটা বাধ্যবাধকতা। কারণ, গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে আঞ্চলিক এই দলটি। বিজেপি’র হাত ধরেও তারা যদি ক্ষমতায় না আসতে পারে তাহলে অগপ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’

বিজেপি’র সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা উড়িয়ে দিয়ে আজমল বলেন, ‘বিজেপি’র সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। তারা আপাদমস্তক মুসলিম বিরোধী। সুযোগ পেলেই মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত করে। তাদের কাছ থেকে সরকার গঠনের প্রস্তাব এলে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। কারণ এটা আমাদের বিশ্বাসের পরিপন্থী।’

মাওলানা বদরউদ্দিন আজমলের পক্ষ থেকে এভাবে তৃতীয় মোর্চার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হলেও কংগ্রেসের দাবি, তারাই রাজ্যে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চলেছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে আগামী ১৯ মে।#

এমএএইচ/এআর/১১