গরু সুরক্ষায় বিল আনছে অসমের বিজেপি সরকার, বিশ্লেষকের প্রতিক্রিয়া
ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে গরুদের রক্ষায় বিল আনা হচ্ছে। রাজ্য বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনে এ সংক্রান্ত বিল আনা হবে বলে রাজ্যপাল জগদীশ মুখী ঘোষণা করেছেন।
গতকাল (শনিবার) অসম বিধানসভায় বক্তব্য রাখার সময়ে রাজ্যপাল জগদীশ মুখী বলেন, মানুষ গো-মাতাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, পুজো করে মন্তব্য করে তিনি একে ‘পবিত্র প্রাণী’ বলে উল্লেখ করেন।
রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের সরকার আগামী বিধানসভা অধিবেশনে গো-সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি বিল চালু করার কথা ভাবছে। রাজ্যের বাইরে গরু পাচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার হবে ওই বিলে।’
তিনি বলেন, ‘গরু সুরক্ষায় শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের বাইরে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একবার ওই বিল পাস হয়ে গেলে অন্য যেসব রাজ্য ইতোমধ্যে ওই বিলটি পাস করেছে তাঁদের তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে অসম।’
এ প্রসঙ্গে অসমের হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘বর্তমানে সরকারের দায়িত্ব এটাই হওয়া উচিত ছিল যে মানুষকে কীভাবে করোনা মাহামারি ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মতো মহামারির তাণ্ডব থেকে বাঁচানো। সেখানে সরকার সেটা না করে, মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ না দেখিয়ে তাঁরা গরুকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। এখানে মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভাবা উচিত ছিল, মাহামারি প্রতিরোধ করার কথা ছিল। কিন্তু যেটা ইস্যু নয়, এরকম একটা বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘অসমে যদি গরুর গোশত ইত্যাদি বিষয়ে লাগাম টানা হয় তাহলে অসমের পার্শ্ববর্তী আরও যে সাতটা রাজ্য আছে তাদের উপরে এর প্রভাব পড়বে। যেমন মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের জনগণ গরুর গোশত খেয়ে থাকেন। এসব রাজ্যে গরু সরবরাহ মূলত অসম থেকেই হয়। সেজন্য ওই ইস্যুতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির প্রভাবে চূড়ান্ত ধস নামতে পারে।’
‘করোনা মহামারি রুখতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের মতো অসমের বিজেপি সরকারও ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণ এবার সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য ওঁদেরকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। অসম সরকারে সেটা মাথায় রাখা উচিত’ বলেও হাইলাকান্দি জেলার বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর মন্তব্য করেন।
অসমের এআইইউডিএফ নেতা ও বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিলের পিছনে অন্য অ্যাজেন্ডা আছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যদি গরুর জোগান বন্ধ হয় তাহলে কী হবে? আমরা মনে করি ওই বিল আইনে পরিণত হলে উত্তর প্রদেশ, রাজস্থানের মতো গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে পারে এই রাজ্যেও। নিষেধাজ্ঞা জারি হলে যারা বৈধভাবে গরু-ছাগলের ব্যবসা করেন বিভিন্ন অজুহাতে তাঁদের উপরে আক্রমণে নেমে আসতে পারে। দেশের বিভিন্ন রজ্যে গরু রক্ষার নামে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।’
‘সরকার স্পষ্ট করে না বললেও প্রস্তাবিত বিলে গরু জবাই বন্ধের বিধান থাকতে পারে সেজন্য সোমবার রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে ওই বিলের বিরোধিতা করা হবে’ বলেও এআইইউডিএফ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম মন্তব্য করেন।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গরু রক্ষাকে সামনে রেখে আইন করে বন্ধ করা হয়েছে গরু জবাই। যদিও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গরুর গোশত স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পড়ে বলে ওই অঞ্চলে গরু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তবে গুজরাট, মধ্য প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যে গরু জাবাই বন্ধে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ৳
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।