ভারতে অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের ঘোষণায় বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া    
https://parstoday.ir/bn/news/india-i92386-ভারতে_অ_মুসলিম_শরণার্থীদের_নাগরিকত্ব_প্রদানের_ঘোষণায়_বিরোধীদের_প্রতিক্রিয়া
ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ‘অ-মুসলিম শরণার্থী’দের নাগরিকত্ব প্রদানের ঘোষণায় বিরোধী নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
মে ৩০, ২০২১ ১৭:৪১ Asia/Dhaka

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ‘অ-মুসলিম শরণার্থী’দের নাগরিকত্ব প্রদানের ঘোষণায় বিরোধী নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

গত (শুক্রবার) রাতে কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যে অ-মুসলিম (হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান) শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন এবং যাঁরা এ দেশে স্থায়ীভাবে থাকার  আবেদন করে দীর্ঘসময় ধরে ভিসা নিয়ে আছেন তাঁদের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৫ (রেজিস্ট্রেশন) ও ধারা ৬ (ন্যাচারালাইজেশন)-এর ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু হতে চলেছে।

গুজরাট, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের মোট ১৩টি জেলায় ওই তিন দেশ থেকে আসা ধর্মীয় শরণার্থীদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন জেলাপ্রশাসকেরা।  

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুজরাটের মোরবি, রাজকোট, পাটান ও ভদোদরা। ছত্তিশগড়ের দুর্গ ও বলোদাবাজার। রাজস্থানের জালোর, উদয়পুর, পালি, বারমের ও সিরোহি। হরিয়ানার ফরিদাবাদ ও পঞ্জাবের জলন্ধরে বসবাসকারী শরণার্থীরা ওই আবেদন করতে পারবেন। 

এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নির্দেশিকা অসৎভাবে, পিছনের দরজা দিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ/‘ক্যা’) প্রয়োগ করার কৌশল। সিপিআই নেতা ডি রাজার মতে,  এতে সরকারের ফ্যাসিস্ট মুখ প্রকাশ্যে এসে গেছে। ‘নাগরিকপঞ্জি বিরোধী যুক্ত মঞ্চ’  কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে ওই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, সরকার ওই নির্দেশ দিতে পারে না, কারণ ২০১৯ সালে পাশ হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ/‘ক্যা’) নিয়ম এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাল্টা সাফাইতে বলা হয়েছে, ওই নির্দেশিকার সঙ্গে ‘সাম্প্রতিক’ সিএএ’র কোনও সম্পর্ক নেই।      

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট সমাজকর্মী ড. ইমানুল হক আজ (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘দেশ এক চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে বেশিরভাগ রাজ্যে লকডাউন এবং এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৩ কোটি ৭০ লাখের  বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বেসরকারি হিসাবে কমপক্ষে ২০ কোটির বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে চলে গেছে। যারা মধ্যবিত্ত হিসাবে চিহ্নিত ছিল। যেখানে ১৩৫ কোটি ভ্যাকসিনের প্রয়োজন। সেখানে ২০  কোটি ৮৯ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে সরকার বলছে। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৪ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৯০৯ টি। একদিকে করোনা, আরেকদিকে হাসপাতাল নেই, অক্সিজেন নেই, মানুষ রাস্তায় মরছে, গাছতলায় পড়ে থাকছে, তাদের শেষকৃত্য পর্যন্ত হচ্ছে না, শ্মশানে পর্যন্ত জায়গা পাচ্ছে না! গণকবর দেওয়া হচ্ছে। জাল ওষুধ  তৈরি হচ্ছে একটার পর একটা। ৪৫০ টাকার ওষুধ ২৫ হাজার ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব নিয়ে সরকারের কোনো ব্যস্ততা নেই।’    

কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট সমাজকর্মী ড. ইমানুল হক

তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যস্ত আছে অন্যদিকে। এক হচ্ছে, ইতিহাসকে ধ্বংস করতে। সেজন্য দিল্লি নগরীকে ধ্বংস করে তার স্থাপত্য, তার লেখ্যাগারের হতিহাসের নথিপত্রকে ধ্বংস করার জন্য তারা সৌন্দর্যের নামে ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা’ তৈরি করছে। সচেতনভাবে করছে। মানুষকে ইতিহাসটা ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য করছে। আরেকদিকে তাঁরা করছে যাতে মানুষ নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরে। সেজন্য তারা হিন্দু-মুসলমান আলাদা করার জন্য তাঁরা ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ/‘ক্যা’) এনেছে। ‘ক্যা’  সবথেকে বেশি দরকার ছিল অসমে। কারণ, সেখানে ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ নাগরিকত্বহীন হয়ে আছেন। সেখানে আগে নাগরিকত্ব দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু ওরা দিচ্ছেন কোথায়? গুজরাট, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের মত রাজ্যে। সেখানে বেশিরভাগ লোকের এই সমস্যা নেই। সবথেকে বেশি সমস্যা তো অসমে। অসমে ১৯ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ‘নাগরিকত্বহীন’। যার মধ্যে ১৭ লাখ বাঙালি। ২ লাখ হলেন নেপালি বা  অন্য কিছু আছেন। এই ১৭ লাখের মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি হিন্দু। তাঁরা যদি ‘হিন্দু প্রেমী’ হবেন তাহলে সেটা (নাগরিকত্ব প্রদান) করছেন না কেন?’   

অধ্যাপক ড. ইমানুল হক আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় মানুষ যখন দুর্বিষহ অবস্থায়, মানুষ যখন ঝড়ে, বন্যয় পড়ে আছেন। তাদের ‘নাগরিকত্ব’ নয় তাদের খাবার দরকার। তাঁরা তো নাগরিক আছেন এ দেশের। না হলে থাকতেন কীভাবে এদেশে ভারতবর্ষের নাগরিক না হলে? আবার ‘নাগরিকত্বের টোপ’ দেখাচ্ছেন! তাদের খাবার দরকার। মাথার উপরে ছাদ দরকার। তাদের উপযুক্ত ত্রাণ দরকার। ইয়াসের ঝড়কে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করার দরকার ছিল। কিন্তু তা না করে তারা হিন্দু-মুসলমান। বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ করছেন। এই ঘৃণ্য সরকারকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে শেষ বিধানসভা নির্বাচনে এবং আগামীদিনে এই  সরকারকে মানুষ উৎখাত করে ছাড়বে। মানুষ রাস্তায় নামবে, মানুষকে রাস্তায় নামতে ওঁরা বাধ্য করছে। শুধু লকডাউন করে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না’ বলেও পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক মন্তব্য করেন।  

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের সাবেক এমপি মমতা ঠাকুর  বলেন, ‘ওই ৫ রাজ্যে আচমকা বিজ্ঞপ্তি জারি করা মানে গোটা ভারতবর্ষে যেখানে যেখানে ওপার বাংলার যারা শরণার্থী ও উদ্বাস্তু হিসেবে বাস করছে তাঁদের আতঙ্কিত করার জন্য এটা করেছে। পশ্চিমবঙ্গে এটা করেনি, তার কারণ হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গে এটা আগামীতে অসমের মতো পরিস্থিতি করবে। সেজন্য ওই ৫ রাজ্যে প্রথম ধাপ শুরু করল। পশ্চিমবঙ্গে এখনই এটা করলে জানে যে আন্দোলন শুরু হবে, সেজন্য আন্দোলন যাতে না হয় তাই ছোটো ছোটো করে এগুলো করছে। ওপার বাংলা থেকে আসা মানুষজন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য এখানে ভালো আছেন। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমরা এদেশের নাগরিক। আমাদের বাবা-মা অখণ্ড ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে। আমরা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমাদের সন্তানরা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছে। আমাদের কেন পরিচয় দিতে হবে ভারতীয় না অ-ভারতীয়? তাহলে ‘ডিএনএ টেস্ট’ হোক আদি ভারতীয় কারা সেজন্য। আমাদের কেন আবেদন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে। আমরা তো এদেশেরই নাগরিক।’       

কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, নয়া নির্দেশিকায় ১৯৫৫ এবং ২০০৯ সালের আইন অনুযায়ী নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ২০১১, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এ ভাবেই দীর্ঘ সময় ধরে এ দেশে ভিসায় থাকা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছিল। এরমধ্যে নতুন কিছু নেই বলেও কেন্দ্রীয় সরকার সাফাই দিয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।