বিরোধীদের বিক্ষোভ, হই-হট্টগোলের জের
ভারতে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন মুলতুবি
ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার কাজকর্ম অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ (বুধবার) স্পিকার ওম বিড়লা ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
গত ১৯ জুলাই থেকে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন থেকে শুরু হয়েছিল। আগামী ১৩ আগস্ট (শুক্রবার) বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের বিক্ষোভ, হই-হট্টগোলের মধ্যে প্রত্যাশা মতো কাজ হয়নি বলেই বুধবার লোকসভায় বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার ওম বিড়লা।
আজ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ‘এই অধিবেশনে লোকসভায় আশানুরূপ কাজ না হওয়ায় আমি সত্যিই দুঃখিত।’ তিনি বলেন, ‘সংসদের কার্যক্রমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। সম্মতি ও ভিন্নমত আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। হাউসটি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিচালিত হয় এবং এটি পরিচালনা করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমাদের সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করা উচিত।’
সংসদ অধিবেশনে ক্রমাগত অচলাবস্থা এবং হইচই পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এখানে ব্যবস্থা গ্রহণের নিয়ম আছে কিন্তু এতে হাউস চলে না। হাউস চলে সংলাপের মাধ্যমে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে।

এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও সমাজকর্মী ড. সাইফুল্লাহ আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘আমরা মনে করছি সত্যিই এটা সরকারের ব্যর্থতা। কিন্তু তারা এটাকে তাদের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন না। আমার বিশ্বাস, তারা এটাকে তাদের জয় বা সাফল্য বলেই মনে করছেন। কারণ, জনতার বা বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করা এদের অন্যতম এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল মাত্র সাত থেকে দশ মিনিটের ব্যবধানে বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াই পাশ করানো হয়েছে। এটা গণতন্ত্রকে হত্যা করা ছাড়া আর কিছু নয়।’
ড. সাইফুল্লাহ আরও বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মই হচ্ছে বিতর্ক হবে এবং সেই বিতর্কের মধ্যদিয়ে সত্য উঠে আসবে। যারা বিরোধীপক্ষে থাকবেন তারা সত্যকে অন্বেষণ করবেন। আর যারা ক্ষমতায় রয়েছেন সেই অন্বেষণকে সম্মান জানাবেন। এরমধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়, গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় থাকে। কিন্তু আমরা দেখছি যে গত কয়েক বছর ধরে এই যে গণতন্ত্রের সাধারণ সংজ্ঞা, সাধারণ সমীকরণ সেটাকেই উল্টে দিয়ে সম্পূর্ণত যাকে আমরা একনায়কতন্ত্র বলি, সেই একনায়কতন্ত্রের দিকেই দেশ ঝুঁকছে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়।’
অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে লোকসভায় বর্ষাকালীন অধিবেশন শেষ হওয়া নিয়ে লোকসভায় প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আচমকা ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনও জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বর্ষাকালীন অধিবেশনের গোটা পর্ব জুড়ে। আজ প্রথম বার মোদিজীকে দেখলাম। যখন সব শেষ হয়ে গেছে, তখন উনি এসেছেন। ‘ওবিসি’ বিল ছাড়া কোনও বিল নিয়েই সংসদে আলোচনা হয়নি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাশ করানো হয়েছে বিল। এই সরকার বিরোধীদের বক্তব্যও সম্প্রচার করে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী।
সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন (১৯ জুলাই) থেকেই পেগাসাস স্পাই ওয়্যার ইস্যু, নয়া কৃষি আইন, জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধিসহ একাধিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধের সংসদে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধী এমপিরা। শুরু থেকেই প্রায় প্রত্যেকদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুলতুবি থেকেছে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভার অধিবেশন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাত থেকে বিবৃতির কাগজ নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা থেকে শুরু করে, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে সংসদের ওয়েলে নেমে স্লোগান ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে।
পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।