ভিয়েনায় শুরু হল বৈঠক
এবার শক্ত অবস্থানে ইরান: অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে সিদ্ধান্ত নিতে চরম বেকায়দায় বাইডেন
ইরান বিরোধী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে চার যোগ এক গ্রুপের সঙ্গে ইরানের আলোচনা আজ থেকে ভিয়েনায় শুরু হয়েছে। সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাকেরির নেতৃত্বে ইরানের ব্যাংক ও জ্বালানি খাত এবং অধিকার ও নীতিমালা বিশেষজ্ঞ দল গত শনিবার ভিয়েনা পৌঁছে। আলী বাকেরি গত দুই দিনে চীন ও রাশিয়ার প্রতিনিধি দল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপ প্রধান এনরিকা ম্যুরার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে, ভালো সমঝোতায় পৌঁছার বিষয়ে তেহরান খুবই আন্তরিক কিন্তু মার্কিন বিদ্বেষী আচরণ সংলাপের পথে বড় বাধা হয়ে আছে। বাইডেন প্রশাসন পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করলেও ইরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ ও হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে। এবারের ভিয়েনা বৈঠকে ইরান কেবল আলোচনার জন্য আলোচনা করবে না এবং সময় ক্ষেপণও করবে না। এ ছাড়া আলোচনার ফলাফলকে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ারও কোনো ইচ্ছা ইরানের নেই। তেহরান চায় কার্যকর ও ফলপ্রসূ আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র এখনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। কিন্তু ইরান চায় নিশ্চয়তা এবং সত্যিই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলো কিনা তা যাচাই বাছাই করার পরই এ দেশটি পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করবে।
নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড বানসেল পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে বলেছেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টেকসই সমঝোতার পথে একটি বড় বাধা হচ্ছে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ তীব্র মতবিরোধ। এই বিরোধ ইরানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলেছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ইরানের স্বার্থ রক্ষার নিশ্চয়তা না দিয়ে একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলতে ইরানকে বাধ্য করার জন্য এ দেশটির ওপর ব্যাপক চাপ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি এবং আগামীতে তারা সফল হবে না। তাই এবারের ভিয়েনা সংলাপে ইরান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে পাকাপোক্ত নিশ্চয়তা চায়।
ইরানের এ অবস্থান থেকে ভিয়েনা আলোচনাকে দুদিক থেকে মূল্যায়ন করা যায়। প্রথমত, পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য ইরান এবার ভিয়েনায় বৈঠকে যোগ দিয়েছে এবং তেহরান চায় কেবল মুখে কিংবা কাগজে কলমে নয় বরং কার্যকরভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হোক। দ্বিতীয়ত, মতবিরোধ এখনো রয়ে গেছে এবং এটা আলোচনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি সংলাপ ভেঙেও যেতে পারে।
ব্রিটিশ দৈনিক ফিনানশিয়াল টাইমসে প্রকাশিত নিবন্ধে ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাকেরি বলেছেন, 'পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা একথা বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, শুধুমাত্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লাগাম টেনে ধরার জন্য ভিয়েনা সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ ইরানের দৃষ্টিতে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সকল পক্ষকে পরমাণু সমঝোতার ধারাগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য করার জন্য। আমেরিকাকে বিনা বাক্যব্যয়ে এই সমঝোতায় ফিরে এসে তেহরানের ওপর আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।'
যাইহোক ভিয়েনায় আজ থেকে শুরু হওয়া আলোচনা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। #
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।