রেডিও তেহরানের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আইআরআইবি বিশ্বকার্যক্রমের প্রধানের বাণী
রেডিও তেহরান বাংলা'র ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) বিশ্বকার্যক্রমের প্রধান আহমাদ নওরোজি একটি বাণী দিয়েছেন। তাঁর মূল্যবান বাণীটি পার্সটুডে ডটকম'র পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হল:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিশ্বের প্রায় সব সমাজ ও সংস্কৃতিতে ‘চল্লিশ’ ও ‘চল্লিশ বছর’ পরিপক্কতা, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ও উৎকর্ষের লক্ষণ বলে ধরা হয়। আর এই দু’টি পরিভাষা আমাদের মুসলমানদেরকে সর্বশেষ পয়গম্বর হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) এর হায়াতে তৈয়্যেবার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যিনি এই চল্লিশ বছর বয়সে মানবজাতিকে হেদায়েত করার গুরুদায়িত্ব অর্জন করেন অর্থাৎ নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন। তিনি ধুলির ধরায় এসেছিলেন নৈতিকতার স্তরকে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে দিতে। তাঁর গণমাধ্যম ছিল 'রহমত’ এবং তাঁর চিন্তাদর্শনে আদম সন্তানদের সঙ্গে দয়া ও সদ্ব্যবহার এমন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী আকর্ষণ শক্তি হিসেবে কাজ করে যা হিজায অভিমুখে দর্শক-শ্রোতাদের ঢল নামিয়ে দেয়।
এই মহান চরিত্রের যেমন ছিল সুন্দর অবয়ব তেমন মধুর ছিল তাঁর কণ্ঠ। আর তারই ফলশ্রুতিতে আজ ইরান থেকে হোক কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ থেকে হোক আমরা সবাই আসমান ও জমিনের এই প্রশংসিত ব্যক্তিত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হয়েছি। আমরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছি, পরস্পরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। আল্লাহ, আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ ও ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অগণিত দরুদ ও সালাম।
বিগত চল্লিশ বছরের প্রতিটি দিন আমরা রেডিও তেহরানের স্টুডিও'র মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বন্ধু ও ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাভাষী প্রিয় ভাই ও বোনদের সামনে আমাদের চারপাশের বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উপমহাদেশ ও সারাবিশ্বের ভালো ও মন্দ ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা। আমরা শুধুমাত্র ইসলামি ইরানের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বিপ্লবের উচ্চকণ্ঠকে আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইনি; যদিও সে কণ্ঠ নিয়ে আপনাদের মতো সম্মানিত মানুষদের সামনে হাজির হয়েছি এবং আপনারা চরম উদারতা দেখিয়ে আপনাদের বাড়িতে আমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন।
যদি বর্ণনাতীত এই আপ্যায়নের মানসিকতা না থাকত যা প্রাচ্যের সংস্কৃতি ও মুমিনসুলভ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ, তাহলে ইরানের একটি রেডিওর পক্ষে কি সারা ভারত ও বাংলাদেশের অসংখ্য শ্রোতাকে একত্রিত করা সম্ভব হতো? [যদি এই মানসিকতা না থাকত তাহলে] হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে প্রচারিত রেডিও তেহরানের ওয়েবসাইটের পক্ষে কি বিদেশি রেডিওগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা সম্ভব হতো? [যদি এই আন্তরিকতা না থাকত তাহলে] আমরা কীভাবে কয়েক দশক ধরে স্বাস্থ্যকথা, রংধনু, প্রিয়জন কিংবা কথাবার্তার মতো অনুষ্ঠান প্রচার করতাম এবং অনুরক্ত শ্রোতারা তা শুনছে বলে নিজেদের ধন্য মনে করতাম?
রেডিও তেহরানের মতো গণমাধ্যমকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মুসলিম, বিপ্লবী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতিগুলোর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরে ইরানের ইসলামি বিপ্লব সত্যিই গর্বিত। মুসলিম বিশ্বের যেসব চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক, শিল্পী, সংস্কৃতি কর্মী ও শিক্ষাবিদ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হতেন তাদের কণ্ঠ প্রচারের সুযোগ দিতে পেরে এই গণমাধ্যম নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে।
পরিশেষে কামনা, আমাদের সম্মানিত এবং মূল্যবান বাংলাভাষী দর্শকদের সঙ্গে চল্লিশ বছর ধরে টিকে থাকা এই পবিত্র গণমাধ্যম প্রতি বছর আগের বছরের চেয়ে আরও বেশি শক্তি নিয়ে ঐক্যের একটি শক্তিশালী সেতুবন্ধন হোক এবং আরও বৃহত্তর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনের একটি মঞ্চ হয়ে উঠুক।
আহমাদ নওরোজি
প্রধান
আইআরআইবি বিশ্বকার্যক্রম, ইরান।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৭