বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে উত্তপ্ত ম্যাচ
ডেটলাইন ২৯ নভেম্বর: 'গ্রেট শয়তান' বনাম ইরান ম্যাচের পুনরাবৃত্তি
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ইমাম খোমেনী (রহ.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রখ্যাত আমেরিকাকে ‘শয়তান-ই-বুজুর্গ’ বা ‘বড় শয়তান’ বলে অভিহিত করেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে উত্তপ্ত ম্যাচটি সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ ২০১৮ বিশ্বকাপের আগে এক প্রতিবেদনে শিরোনাম করেছিল ‘গ্রেট শয়তান ১-২ ইরান’।
হ্যা, আমরা ১৯৯৮ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ইরান ও আমেরিকার ম্যাচটি সম্পর্কে কথা বলছি; যে ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে আসন্ন কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এ। গার্ডিয়ান পত্রিকা ইরানের তৎকালীন স্বদেশি কোচ জালাল তালেবির স্মৃতিচারণায় প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল।
আমেরিকার বর্তমান কোচ বেরহল্টার সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘মনে আছে। আমি একটা ডাচ টিভিতে ধারাভাষ্য দিয়েছিলাম। সেবারই প্রথম ওদের মুখোমুখি হই। তখন রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত সম্পর্কের মধ্যে ম্যাচটি হয়েছিল।’
১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে এক ঐতিহাসিক বিপ্লবে আমেরিকার মদদপুষ্ট শাহ প্রশাসন ইরানের শাসনক্ষমতা হারালে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা শুরু হয়।
১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে এফ গ্রুপে আমেরিকার সঙ্গী হয় ইরান। দুটি দলের মধ্যে ম্যাচ নিয়ে তখন মার্কিন ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান বলেছিলেন, ‘মাদার অব অল ম্যাচ’। ম্যাচটি ইরানের কাছে রাজনৈতিক কারণের বাইরেও ঐতিহাসিক- বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে সেটাই প্রথম জয় ইরানের। সেটাও ‘শত্রু’ আমেরিকার বিপক্ষে হওয়ায় ইরানের সমর্থকদের উৎসবটা ছিল বিশ্বকাপ জয়ের মতোই। ইরানের কাছে হারে সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় আমেরিকার। ওই ম্যাচটিকে বলা হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে উত্তপ্ত ম্যাচ।
প্রায় ৪০ বছরের রাজনৈতিক বৈরী সম্পর্ক ও পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বিরোধ একপাশে সরিয়ে কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে আবার আমেরিকার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইরান। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নব্য সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার পাশে একই গ্রুপে আছে আরেক উপনিবেশবাদী দেশ ইংল্যান্ডও। এই গ্রুপে ইউরোপিয়ান প্লে–অফ থেকে উঠে এসেছে ওয়েলস।
ইরান গত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেলেও আমেরিকা পায়নি। ইরান অবশ্য কখনো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব টপকে যেতে পারেনি।
কিন্তু বি গ্রুপে আর যারাই থাকুক না কেন রাজনৈতিক বিবেচনায় সবার নজর থাকবে আমেরিকা-ইরান ম্যাচে। ডেট লাইন ২৯ নভেম্বর: দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। দুই দলের কোচরা অবশ্য রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। রাজনীতিকে এক পাশে সরিয়ে তারা এটাকে নিছক একটা ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন। আমেরিকা কোচ গ্রেগ বেরহল্টার বলেছেন, দিন শেষে এটা স্রেফ একটা ফুটবল ম্যাচ, যেখানে ন্যায়সঙ্গত শক্ত লড়াইয়ের মাধ্যমে বন্ধুত্ব হতে পারে। ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজও রাজনৈতিক বৈরী সম্পর্ককে এক পাশে সরিয়ে রাখছেন, ‘ফুটবল ছাড়া আমি আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না। আমি বিশ্বাস করি, ফুটবল ভালো সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে। লোকে খেলাধুলায় এটাই দেখতে চায়।’#
পার্সটুডে/এমএমআই/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।