ইরানের ইসলামি বিপ্লব কীভাবে উপনিবেশবাদীদের কুচক্রি খেলাকে পণ্ড করে দিয়েছে?
পার্সটুডে: ইরানের ইসলামি বিপ্লবের কারণে বিশ্বের আধিপত্যকামী শক্তিগুলো এদেশ থেকে আগ্রাসনের কালো হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ওইসব শক্তি অচিরেই একথা উপলব্ধি করে যে, এই বিপ্লবের একটি বৈশ্বিক বার্তা রয়েছে এবং এর শোষণমুক্ত বিপ্লবী চিন্তাধারা বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত জাতিগুলোর হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছে। এই বিপ্লব মুসলিম তো বটেই এমনকি অমুসলিম স্বাধীনতাকামীদের জন্যও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ক্ষেত্রে মডেল হয়ে উঠেছে।
ইসলামি বিপ্লবের পরদিন থেকেই পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একথা বলতে শুরু করেন যে, অচিরেই ইরান-বিপ্লবের ইতি ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে সাড়ে চার দশক ধরে এই বিপ্লব টিকে আছে এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামি বিপ্লবের প্রতি গোটা বিশ্বের এত গভীর দৃষ্টির কারণ কী?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সংঘটিত হওয়ার সময়টি লক্ষ করতে হবে। সে সময় বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল কব্জা করার জন্য ইরানের তৎকালীন পাহলাভি শাসককে নিজের অনুগত ভৃত্যে পরিণত করেছিল। অন্যদিকে কথিত আধুনিকতার নামে কামাল আতাতুর্ক তুরস্কে ইসলামের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল ইরানের পাহলাভি শাসক তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে যাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে পশ্চিমা রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিকদের মন এই আনন্দে নেচে উঠেছিল যে, তারা অচিরেই ইসলামবিহীন একটি মধ্যপ্রাচ্য পেতে যাচ্ছে।
ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর স্বাধীনতাকামী আন্দোলনগুলোকে সে সময় কঠোর হাতে দমন করা হচ্ছিল। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছিল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবরদখল করে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। ইহুদিবাদীরা ইউরোপ ও আমেরিকার সমর্থন নিয়ে নীল থেকে ফোরাত পর্যন্ত ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে ইরানে এমন একটি বিপ্লব হয় যেটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় শক্তির আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। ইমাম খোমেনী নামক একজন আলেমের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বিপ্লবে ইরানের আপামর জনসাধারণ অংশগ্রহণ করে। ইসলামি বিপ্লবের বহু বছর আগে ইমাম খোমেনী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন:
“আমি ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকে ইরানি জাতির পাশাপাশি বিশ্ব মুসলিমকে এই বলে সতর্ক করতে চাই যে, পবিত্র কুরআন ও ইসলাম বিপদের মুখে পড়েছে।”
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের কারণে বিশ্বের আধিপত্যকামী শক্তিগুলো এদেশ থেকে আগ্রাসনের কালো হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ওইসব শক্তি অচিরেই একথা উপলব্ধি করে যে, এই বিপ্লবের একটি বৈশ্বিক বার্তা রয়েছে এবং এর শোষণমুক্ত বিপ্লবী চিন্তাধারা বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত জাতিগুলোর হৃদয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছে। এই বিপ্লব মুসলিম তো বটেই এমনকি অমুসলিম স্বাধীনতাকামীদের জন্যও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ক্ষেত্রে মডেল হয়ে উঠেছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রকল্পগুলো একের পর এক ভেস্তে যেতে দেখে এ অঞ্চলে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে আধিপত্যকামী শক্তিগুলো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের বড় শক্তিগুলো এখন পশ্চিম এশিয়ার চোরাবালিতে আটকে গেছে।
তারা একবার ‘বৃহৎ মধ্যপ্রাচ্য’ নামক পরিকল্পনার জিগির তোলে আরেকবার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে মুসলমানদের মধ্য থেকেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গড়ে তোলে এবং অবশেষে স্বাধীনতার নামে নিজের তৈরি সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পতন ঘটাতে গিয়ে মুসলিম দেশগুলোকে মার্কিন ও ইউরোপীয় সেনাদের দখলদারিত্বের অধীনে নিয়ে নেয়। এই সেনা মোতায়েন ও দখলদারিত্বের পরিণতি হয়েছে একটিই: “পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলো আজ পশ্চিম এশিয়ার চোরাবালিতে আটকা পড়েছে।”
তারা ৭৫ বছর আগে প্রলোভন, হুমকি ও অপমানজনক আচরণের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইল সরকারের অপবিত্র বীজ বপন করেছে। তাদের অভিলাস ছিল এই বীজ থেকে সৃষ্ট বৃক্ষটি নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করে নেবে। কিন্তু আজ সেই ৭৫ বছর আগের মানচিত্রের চারপাশে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ইহুদিবাদীরা নিরাপত্তা প্রাচীর দিতে বাধ্য হয়েছে। আর তার শত্রু হচ্ছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ছায়াতলে প্রশিক্ষিত ইসলামি প্রতিরোধ অক্ষ।#
পার্সটুডে/এমএমআই/এমএআর/১৩