খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি কীভাবে মঙ্গোলদের আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i140578-খাজা_নাসিরুদ্দিন_তুসি_কীভাবে_মঙ্গোলদের_আমূল_পরিবর্তন_করে_দিয়েছিলেন
পার্সটুডে: ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায়, খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি ইরানের মারাগে এলাকায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করতেন। তিনি এমন কিছু ছাত্র তৈরি করেছিলেন যারা মোগলদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
আগস্ট ১৩, ২০২৪ ১৮:০০ Asia/Dhaka
  • ইরানের খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি কীভাবে মঙ্গোলদের ওলটপালট করে দিয়েছিলেন
    ইরানের খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি কীভাবে মঙ্গোলদের ওলটপালট করে দিয়েছিলেন

পার্সটুডে: ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায়, খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি ইরানের মারাগে এলাকায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করতেন। তিনি এমন কিছু ছাত্র তৈরি করেছিলেন যারা মোগলদের পরবর্তী প্রজন্মগুলোকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

ইরানে প্রবেশ করার পর মঙ্গোলদের মধ্যে যে পরিবর্তন এসেছিল তা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এ ঘটনায় মঙ্গোলদের ওপর ইরানের শিক্ষা ও সংস্কৃতির গভীর প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি (৫৭৯-৬৭২ হিজরি)(১২০১-১২৭৪ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন মঙ্গোলদের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও মন্ত্রী। হিংস্র স্বভাবের অধিকারী মঙ্গোলদের চিন্তাধারা ও আচরণে ভারসাম্য আনার কাজে যেসব ব্যক্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাদের অন্যতম ছিলেন তুসি। পার্সটুডে ম্যাগাজিনের এই আলোচনায় খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি মঙ্গোলদের চিন্তা ও মনোজগতকে সম্পূর্ণ বদলে দেওয়ার কাজটি কীভাবে করতে পেরেছিলেন তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে:

১- বিজ্ঞানচর্চা ও বিভিন্ন জাতির চিন্তাধারার সঙ্গে মঙ্গোলদের পরিচিতকরণ

খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি মঙ্গোল শাসক খালাকু খানের দরবারে মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই পারিষদবর্গের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কুরআন, হাদিস, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন ইরানি এই পণ্ডিত। খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি বিভিন্ন বিষয়ে ফার্সি, আরবি ও তুর্কি ভাষায় অন্তত ১৫০টি গ্রন্থ রচনা করেন। হালাকু খানের দরবারে অবস্থানকালে তিনি মঙ্গোলদের চিন্তাধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার জন্য নিজে কিছু বই রচনা করেন এবং বিখ্যাত মনীষীদের কিছু বই অনুবাদ করেন।

সমসাময়িক ইরানি সভ্যতা বিশেষজ্ঞ হোসেইন মাসুমি হামেদানি বলেন, যে যুগে আলামুত দূর্গে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চলছিল তখন খাজা নাসির ইসমাইলিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে গবেষণায় মন দিয়ে বহু কিতাব রচনা করেন। তার অনুবাদ করা বিভিন্ন কিতাব অধ্যয়ন করে মঙ্গোলরা অন্যান্য জাতি ও সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। ৬৫৭ হিজরিতে ইরানের মারাগে এলাকায় একটি মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করা ছিল খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।  হালাকু খানের পৃষ্ঠপোষকতায় মানমন্দিরটি সে যুগের বিজ্ঞান গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।  খাজা নাসির মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ওই মানমন্দিরে নিয়ে আসেন এবং ওই স্থাপনাকে বিজ্ঞান চর্চার একটি ঘাঁটিতে পরিণত করেন। এসব বিশ্বখ্যাত পণ্ডিতদের সান্নিধ্যে থাকার ফলে মঙ্গোল শাসক হালাকু খানসহ তার পারিষদবর্গের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন আসে এবং তারা তাদের হিংস্র মনোবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

২- আচরণে ভারসাম্য আনয়ন

খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির চিন্তাধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সংযোগ ঘটানো এবং এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। তিনি মনে করতেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িতে না গিয়ে এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। খাজার এই দৃষ্টিভঙ্গি মঙ্গোলদের ওপর বিশেষ করে হালাকু খানের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ব্যাপক গণহত্যা পরিচালনাকারী এই মঙ্গোল শাসক শেষ পর্যন্ত ধর্মবিদ্বেষ বাদ দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িয়েছিলেন।

৩- যুক্তবাদিতা ও ইরানি দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত করানো

খাজা নাসিরুদ্দিন তুসি  ইবনে সিনার যুক্তিবাদী দর্শন পুনরুজ্জীবিত করে মঙ্গোলদের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আনেন। ইরানের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ হাসান আনসারির মতে, খাজা নাসির ইবনে সিনার পুরনো দর্শন পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন; ফলে মঙ্গোল শাসকরা সহিংস উপায়ে রাজকার্য পরিচালনা বাদ দিয়ে চিন্তাভাবনা করে ও যুক্তি দিয়ে শাসনকাজ পরিচালনার দিকে মনোনিবেশ করেন।

- মারাগে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও মঙ্গোলদের সন্তানদের লেখাপড়া করানো

খাজা নাসিরুদ্দিন মারাগে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তার হাতে তৈরি করা শিক্ষকদের নিয়োগ দেন। এসব শিক্ষক মঙ্গোলদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব নেন। এসব সন্তান বড় হয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের মতো হিংস্র না হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করেন। মারাগে স্কুল থেকে এসব শিক্ষার্থী ইরানি শিল্প-সংস্কৃতিও রপ্ত করেন। #

পার্সটুডে/এমএমআই/জিএআর/১৩