ইরান কেন জর্মানির গ্যাটে ইনস্টিটিউটকে নিষিদ্ধ করল?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i141296-ইরান_কেন_জর্মানির_গ্যাটে_ইনস্টিটিউটকে_নিষিদ্ধ_করল
পার্সটুডে- তেহরান টাইমস পত্রিকা লিখেছে, ইরানের 'গ্যাটে ' ইনস্টিটিউট শুধুমাত্র একটি জার্মান ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই নয়, ইরানে জার্মানির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৪ ১৯:৪৯ Asia/Dhaka
  • ইরান কেন জর্মানির গোথে ইনস্টিটিউটকে নিষিদ্ধ করল?
    ইরান কেন জর্মানির গোথে ইনস্টিটিউটকে নিষিদ্ধ করল?

পার্সটুডে- তেহরান টাইমস পত্রিকা লিখেছে, ইরানের 'গ্যাটে ' ইনস্টিটিউট শুধুমাত্র একটি জার্মান ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই নয়, ইরানে জার্মানির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

গ্যাটে ইনস্টিটিউট যা বিশ্বজুড়ে জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচারের প্রতীক হিসাবে পরিচিত, ভাষা শিক্ষার বাইরেও তারা বেশ কিছু লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ করে বলে মনে করা হয়। তাদের এ সব কাজ বা লক্ষ্য অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য সমাজের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসাবে পরিগণিত হয়।   

এ প্রেক্ষাপটে ইরানে গ্যাটে ইনস্টিটিউট (ডিএসআইটি) বন্ধ করে দেওয়ায় নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তেহরান টাইমস পত্রিকার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানটির সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের আড়ালে ইরানে অবৈধ কার্যকলাপ এবং নিঃশব্দে নীরবে প্রভাব বিস্তারে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এই পত্রিকার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইরানে এই প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণ ব্যখ্যা করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে গ্যাটে ইনস্টিটিউটের শাখা বন্ধ

এই মাসের শুরুতে, ইরানের বিচারিক আদেশে তেহরানের গ্যাটে জার্মান ভাষা ইনস্টিটিউটের দুটি শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তেহরান টাইমসের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে, এই প্রতিষ্ঠানটি ইরানি নাগরিকদের প্রভাবিত করার জন্য এবং ইরানে জার্মানির রাজনৈতিক মিশনগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য জার্মান সরকারের গোপন মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে।

গোপন সাংস্কৃতিক তৎপরতায় অবৈধ আর্থিক সহায়তা

তেহরান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্যাটে ইনস্টিটিউট চিহ্নিত বিশেষ শিল্পগোষ্ঠী  এবং কখনও কখনও আন্ডার ওয়ার্ল্ড শিল্প গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার জন্য বার্ষিক অর্ধ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করত। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নজরদারীকে আড়াল করার লক্ষ্যে এই কৌশলগুলো অবলম্বন করা হয়েছিল। অথচ এ ধরণের প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সকল পর্যালোচনা শেষ করে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে এই প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নকৃত অনেক কর্মকাণ্ড ইরানের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।

জার্মান গ্যাটে ইনস্টিটিউটের সাথে সংযোগ এবং এর  রাজনৈতিক ভূমিকা

এই সংবাদপত্রের তথ্য অনুসারে, তেহরানে এই প্রতিষ্ঠানের বাজেটের একটি অংশ গ্যাটে ইনস্টিটিউট দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল;আর এই সংস্থাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান সরকার অর্থায়ন করে থাকে। সারা বিশ্বে এর শতাধিক শাখা রয়েছে। তেহরান টাইমসের মতে, তেহরানে এই সংস্থার সাথে জার্মানির গোথে ইনস্টিটিউটের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হলেও তেহরানে এই সংস্থার দুটি শাখা বন্ধ করার সময় প্রাপ্ত দলিল প্রমাণে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি গোথে ইনস্টিটিউটের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো এবং এর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেত। তেহরান টাইমস বেশ কয়েকটি নথি এবং অন্তত ৯টি আর্থিক রেকর্ড পর্যালোচনা করেছে যা থেকে বোঝা যায় এই সংস্থাকে হাজার হাজার ইউরো প্রদান করা হয়েছে। এইসব নথিগুলোতে গোথে ভাষা ইনস্টিটিউটের সিইও এবং তেহরানে জার্মান রাষ্ট্রদূত স্বাক্ষর করেছেন।

ইরানী শিক্ষার্থীদের অবৈধ বৃত্তি প্রদান

এছাড়াও, জর্মান ভাষা শিক্ষার সুযোগের বাইরে গিয়ে Goethe Institute for Language Education (DSIT) বেআইনিভাবে কিছু লোককে জার্মানিতে অভিবাসনের জন্য বৃত্তি প্রদান করেছে। এই অভিবাসী ছাত্ররা তাদের পেশাদার বা একাডেমিক ক্ষেত্রে দক্ষ হিসাবে স্বীকৃত ছিল।

অবৈধ কার্যকলাপ এবং পশ্চিমা স্বার্থের জন্য নেটওয়ার্কিং

এই সংবাদপত্রের মতে, কিছু লোক যাদের সাথে গ্যাটেইনস্টিটিউটের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এমন নেটওয়ার্কগুলিতে প্রবেশ করেছিল যাদের উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ কার্যকলাপ বা প্রকল্পগুলি চালানো যা জার্মানি এবং পশ্চিমের স্বার্থে কাজ করবে।

কর ফাঁকি এবং প্রয়োজনীয় অনুমতির অভাব

তেহরান টাইমস আরও জানতে পেরেছে যে গ্যাটে ইনস্টিটিউট ১৯৯৫ সাল থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই ইরানে কাজ করছে। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্জিত বার্ষিক আয় থেকে প্রদেয় কর প্রদান না করা।

গ্যাটে ইনস্টিটিউট বন্ধ এবং হামবুর্গে ইসলামিক সেন্টারে হামলার বিষয়ে জার্মানির প্রতিক্রিয়া

একটি ওয়াকিবহাল সূত্র তেহরান টাইমসকে বলেছে যে, জার্মানির প্রভাব বিস্তার ও হস্তক্ষেপের মাধ্যম হিসাবে গোথে ইনস্টিটিউট বন্ধ করা খুব কঠিন ছিল। কেননা এই পদক্ষেপ প্রভাবশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসাবে জার্মানির জন্য মেনে নেয়াটা অত্যন্ত কঠিন। এ কারণে তারা হামবুর্গের ইসলামি কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার প্রতিক্রিয়া হিসাবে তেহরানের এ পদক্ষেপকে মূল্যায়ন করছে। গত মাসে জার্মান পুলিশ হঠাৎ করে এবং বিনা ওয়ারেন্টে জার্মানির বৃহত্তম শিয়া মুসলিম কেন্দ্র হামবুর্গ ইসলামিক সেন্টারের সাথে যুক্ত ৫৩ টি সম্পত্তিতে অভিযান চালায়। জানা যায় যে জার্মানিতে ইসরাইলি লবির চাপে এই পদক্ষেপ নিয়েছিল জার্মানি সরকার।

তেহরানে জার্মান দূতাবাসের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভুত আচরণ

একটি অদ্ভুত এবং অপ্রচলিত কূটনৈতিক পদক্ষেপে, তেহরানে গ্যাটে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার পরে,তেহরানে জার্মান দূতাবাস ইনস্টাগ্রামে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টুইট শেয়ার করে ইরানের আইনি পদক্ষেপকে মশকরা করেছে যা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভুত আচরণ। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসে/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।