ট্রাম্প সহযোগীদের দুর্নীতি জেলেনস্কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতির চেয়ে বেশি বিপজ্জনক
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154976-ট্রাম্প_সহযোগীদের_দুর্নীতি_জেলেনস্কি_সংশ্লিষ্ট_ব্যক্তিদের_দুর্নীতির_চেয়ে_বেশি_বিপজ্জনক
পার্সটুডে- পলিটিকো নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীদের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা, প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিণতি ইউক্রেনের দুর্নীতির চেয়েও বড় এবং বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে।
(last modified 2025-12-11T12:40:43+00:00 )
ডিসেম্বর ১১, ২০২৫ ১৩:৪৬ Asia/Dhaka
  • ট্রাম্পের সহযোগী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা এবং একটি কোম্পানির মালিক জ্যারেড কুশনার
    ট্রাম্পের সহযোগী রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা এবং একটি কোম্পানির মালিক জ্যারেড কুশনার

পার্সটুডে- পলিটিকো নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহযোগীদের মধ্যে দুর্নীতির মাত্রা, প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিণতি ইউক্রেনের দুর্নীতির চেয়েও বড় এবং বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে।

যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেন তার গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকিয়ে রাখতে লড়াই করছে, সেই সময় দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট সহযোগীদের মধ্যে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। পার্সটুডে অনুসারে,পলিটিকো নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ভলোদিমির জেলেনস্কির সহযোগীদের আর্থিক দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে দেশটির পরিস্থিতির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বর্তমানে যা ঘটছে তার তুলনা করে বলেছে যে এই সমীকরণের উভয় দিকেই দুর্নীতির গভীরতা এবং প্রকৃতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র রয়েছে।

এই বিশ্লেষণ অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং সংকট সত্ত্বেও জাতীয় দুর্নীতি দমন ব্যুরো (NABU) সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে এবং আর্থিক অনিয়মের জন্য প্রেসিডেন্টের মন্ত্রী, তার উপদেষ্টা এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের জবাবদিহি করছে। কিন্তু বিপরীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের চক্র এক ধরণের কাঠামোগত দুর্নীতির সাথে জড়িত যা বৃহত্তর,আরো জটিল এবং বিশ্ব রাজনীতিতে আরো প্রভাবশালী।

আমেরিকান প্রকাশনার মতে,"ইউক্রেন তার টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে এবং প্রতি রাতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনীয় শহরগুলোকে লক্ষ্য হামলা চালানো হচ্ছে। তবুও এই পরিস্থিতিতেও অনেক ইউক্রেনীয় এমন একটি সরকার চায় যা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। একই সাথে আমেরিকান এবং রাশিয়ান অভিজাতরা তাদের উপকারে আসে এমন চুক্তি করার উপায় খুঁজছে।"

"অপারেশন মিডাস" নামে পরিচিত সাম্প্রতিক ইউক্রেনীয় তদন্তটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের স্বচ্ছতার প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ। মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তি চুক্তি থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। যদিও লঙ্ঘনের মাত্রা তাৎপর্যপূর্ণ, তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইউক্রেনীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া যেখানে মন্ত্রীদের অভিশংসন করা হচ্ছে, সিনিয়র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং এমনকি জেলেনস্কির নিকটতমদেরও বিচার করা হচ্ছে। এই প্রবণতা আইনের মধ্যে কাজ করে এমন একটি সুস্থ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়।

গণমাধ্যমের মতে, অনেক ইউক্রেনীয় এবং প্রকৃতপক্ষে ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করেন যে জেলেনস্কিকে দুর্বল করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তায় কোনওভাবে তদন্তটি পরিচালিত হয়েছিল।

তবে, ট্রাম্পকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এক ভিন্ন ধরণের দুর্নীতির পরিচয় দেয় বলে মনে হচ্ছে; দুর্নীতি যা সরাসরি ঘুষের আকারে নয়, বরং ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ অর্জনের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের আকারে প্রকাশিত হয়।

পলিটিকোর মতে, ইউক্রেন নিয়ে মস্কোতে সাম্প্রতিক আলোচনায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রতিনিধি হিসেবে দুই অপ্রচলিত ব্যক্তিত্ব আবির্ভূত হয়েছেন: রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা এবং একটি কোম্পানির মালিক জ্যারেড কুশনার যারা ইতিমধ্যেই সৌদি আরব থেকে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। এই উপস্থিতি ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে সরকারের ভূমিকায় একটি বিপজ্জনক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, এই ব্যক্তিরা অক্টোবরে মিয়ামিতে রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান এবং ক্রেমলিনের একজন অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্ব কিরিল দিমিত্রিভের সাথে দেখা করেছিলেন। এই বৈঠকটি কেবল ইউক্রেন নিয়েই নয়, বরং আমেরিকান ও রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতের বড় বড় বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনার বিষয় ছিল। প্রস্তাবগুলোতে "বিরল পৃথিবী এবং জ্বালানি শিল্পে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি" অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ইউরোপের অর্থনৈতিক মানচিত্রকে নতুন করে রূপ দিতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে পারে।

আমেরিকান মিডিয়া আউটলেটটি লিখেছে,  "উইটকফ এবং কুশনার যে দুর্নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন তা কেবল ঘুষের চেয়েও গভীরতর; তারা আমেরিকান সরকারের হাতিয়ারগুলো এমনভাবে ব্যবহার করে যা তাদের বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের উপকার করে, এমনকি যদি এটি আমেরিকান মিত্র, আমেরিকান জোট এবং আমেরিকান বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও করে। এটি একটি বিশাল আকারের স্বার্থের দ্বন্দ্ব যার আধুনিক আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতিতে কোনও বাস্তব নজির নেই।"

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরণের দুর্নীতি বিশেষভাবে বিপজ্জনক কারণ এটি কেবল আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির কাঠামোকে দুর্বল করে না, বরং জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথগুলোকে সংকীর্ণ গোষ্ঠী স্বার্থের সাথে সংযুক্ত করে। প্রতিবেদনের শেষ অংশে জোর দেওয়া হয়েছে যে ইউক্রেনে সরকার নিজেই দুর্নীতি প্রকাশের জন্য দায়ী,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প চক্রের অন্যায় কাজগুলো অবাধে তদন্ত করতে সক্ষম হবে তা কল্পনা করা কঠিন।#

পার্সটুডে/এমবিএ/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন