সৌদি সেনা প্রধান তেহরানে: ইরান -সৌদি সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে;
পারস্য উপসাগরে ইরানের নৌ মহড়ায় অংশ নিতে সৌদি আরবকে আমন্ত্রণ
-
ডানে: ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মাদি বাকেরি, - বামে: সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ফাইয়াজ বিন হামেদ আর রাওয়াইলি
পার্সটুডে- সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ফাইয়াজ বিন হামেদ আর রাওয়াইলি গত ১০ নভেম্বর রবিবার একটি উচ্চ পদস্থ সামরিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে তেহরান সফরে আসেন এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মাদি বাকেরি সাথে সাক্ষাৎ করেন।
২০২৩ সালের মার্চ থকে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক নয়া অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে ৭ বছরের টান টান উত্তেজনার পর উভয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়। পার্সটুডে জানিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে তেহরান ও রিয়াদের দৃঢ় সংকল্পের একটি নিদর্শন হল, ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সফর এবং ইরান ও সৌদি আরবের রাজনৈতিক কর্মকর্তাদের রিয়াদ ও তেহরান সফর। এসব সফরে দু দেশের কর্মকর্তারা আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
গত দুই মাসে দুই দেশের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক সফর করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাকচি এক মাস আগে অক্টোবরের গোড়ার দিকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফর করেন এবং সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গেও আলাপ করেন।
ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গরিবাবাদীও কয়েকদিন আগে সৌদি আরব সফর করেছিলেন। এছাড়াও, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাকচি রবিবার সৌদি আরব সফর করেছেন।
একই সময়ে, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শনিবার সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে টেলিফোনালাপে সৌদি আরবের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে ইরানের সদিচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্সও এই টেলিফোনালাপে বলেছেন: ইরান-সৌদি সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক মোড় নিয়েছে এবং আমি আশা করি এ দুই দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের তেহরান সফরের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। কেননা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সফর বিনিময়ের বিপরীতে দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের সফর কমই হয়ে থাকে।
যাইহোক, এ সফর থেকে বোঝা যায় যে ইরান এবং সৌদি আরবের মধ্যকার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্টে রয়েছে এবং অন্যান্য দেশের ঘটনা বা পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের বর্তমান ঘটনাবলী দ্বারা প্রভাবিত হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ আবারও বিজয়ী হওয়ার কয়েকদিন পর সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ইরান সফরে এলেন। স্মরণ করা যেতে পারে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের প্রথম মেয়াদে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
মিডিয়া ইরান ও সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে বৈঠকের খবরাখবর প্রকাশ করেনি, তবে কিছু মিডিয়া জানিয়েছে যে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এই বৈঠকে জানিয়েছেন যে, আগামী বছর পারস্য উপসাগরে ইরানের নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণ বা পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য সৌদি নৌবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মোটকথা, কূটনৈতিক বৈঠকের পাশাপাশি সৌদি আরব ও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীর করার বিষয়টিকে তাদের সবচেয়ে অগ্রাধিকারমূলক ও গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে বিবেচনা করেছে।
জার্মানির "ডয়চে ভেলে" ওয়েবসাইট, মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে লিখেছে: "চীনের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর, দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এখন তাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়।"
এটা স্পষ্ট যে আঞ্চলিক উন্নয়নে দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ফিলিস্তিন সমস্যাসহ বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।