মার্কিন নাগরিকরা কি ইরান সফরে আসতে পারে?
(last modified Tue, 13 May 2025 10:07:10 GMT )
মে ১৩, ২০২৫ ১৬:০৭ Asia/Dhaka
  • মার্কিন নাগরিকরা কি ইরান সফরে আসতে পারে?

পার্স টুডে : অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগে: আমেরিকার নাগরিকরা কি ইরানে ভ্রমণ করতে পারে? সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো: হ্যাঁ।

কয়েক দশক ধরে ইরান ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন চললেও প্রতি বছর কিছুসংখ্যক মার্কিন পর্যটক ইরানে ভ্রমণ করেন। তারা কৌতূহলবশত ইরানে আসেন, দেশটির বাস্তব চিত্র নিজের চোখে দেখার জন্য।

পার্স টুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইরান সম্পর্কে যেভাবে প্রচারণা চালানো হয়, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও আতিথেয়তাপূর্ণ একটি দেশ ইরান।

ড্রু বিনস্কি (মূল নাম ড্রু গোল্ডবার্গ), যিনি আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরের বাসিন্দা, তিনি বলেছেন: "সাধারণ ধারণার বিপরীতে, ইরান অত্যন্ত নিরাপদ এবং এখানকার মানুষ অতিথিপরায়ণ—আমি আগে কখনও এমন আতিথেয়তা দেখিনি। তারা (স্থানীয়রা) আমার সাথে থাকতেন যতক্ষণ না নিশ্চিত হতেন যে আমি সুস্থ ও নিরাপদে আছি। আমি আপনাদের ধোঁকা দিতে চাই না—আমি যা বললাম, তা শতভাগ সত্য।"

ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর বাসিন্দা জন পল সেলভা (যিনি জে.পি নামে পরিচিত) ইরান ভ্রমণ সম্পর্কে বলেন: "ইরানিদের আতিথেয়তা বিশ্বে অতুলনীয়।" তিনি তিনবার ইরান ভ্রমণ করেছেন, কিন্তু এক রাতও হোটেল বা গেস্টহাউসে কাটাননি—বরং সব সময় ইরানিদের বাড়িতে অতিথি হয়েছেন।

তিনি বলেন: "এটা এমনিতেই শুরু হয়েছিল। আমি একজনের বাড়িতে থাকতাম, তারপর তারা জিজ্ঞাসা করতেন, 'পরের গন্তব্য কোন শহর?' আমি বলতাম, 'জানি না, সম্ভবত ইস্ফাহান।' তখন তারা বলতেন, 'ওহ, দারুণ! ইস্ফাহানে আমার চাচাতো ভাই থাকে, তুমি তার বাড়িতে থাকতে পার।' এভাবেই এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়া হতো।"

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা: দুই দেশের জনগণের মধ্যে বাধা

কিন্তু এত ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও, কেন আমেরিকানদের ইরান ভ্রমণ এখনও সীমিত? ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমা মোহাজেরানি সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে উল্লেখ করেছেন: "আমরা কখনও আমেরিকানদের বিনিয়োগ বা উপস্থিতি নিয়ে সমস্যা করিনি। বরং তারাই ইরানের বিশাল সম্ভাবনা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেছে।"

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়েদ আব্বাস মুসাভিও একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জোর দিয়ে বলেছেন: "মূল সমস্যা হলো আমেরিকার জটিল আইন ও বহুমুখী নিষেধাজ্ঞা, যা তাদের নাগরিকদের জন্য সাধারণ অর্থনৈতিক লেনদেনকেও কঠিন করে তুলেছে।"

ইতিহাসের উত্তপ্ত অধ্যায়: ২৮ মোরদাদের অভ্যুত্থান থেকে অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা

ফার্সি ১৯৫৩ সালের ২৮ মোরদাদের অভ্যুত্থানকে ইরানের বিষয়ে আমেরিকার হস্তক্ষেপের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা মোসাদ্দেক সরকারকে উৎখাত এবং একটি সম্পূর্ণ অনুগত সরকার স্থাপনের প্রস্তাব মার্কিন প্রতিনিধিদের দিয়েছিলেন, যা ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে আমেরিকার সমর্থন পায়।

ইসলামি বিপ্লবের পর, আমেরিকার একতরফা নিষেধাজ্ঞা কেবল ইরানের অর্থনীতিকেই নয়, বরং জনগণের মধ্যে যোগাযোগকেও প্রভাবিত করেছে।

সম্পর্কের ভবিষ্যৎ: উত্তেজনার মাঝেও সহযোগিতার আশা

যদিও আমেরিকার হস্তক্ষেপ ও নীতির কারণে ইরান-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তবুও পর্যটকদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং আমেরিকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একাংশের আগ্রহ দেখে বোঝা যায় যে, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো একদিন নিষেধাজ্ঞার বদলে কূটনীতির প্রচেষ্টা জয়ী হবে এবং তখন যেকোনো মার্কিন নাগরিকের জন্য ইরান ভ্রমণ একটি প্লেন টিকেট কেনার মতোই সহজ হবে।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৩