পাকিস্তানে পেজেশকিয়ানের প্রথম সফর
পাকিস্তানে ইরানি প্রেসিডেন্টের সফরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব
-
পেজেশকিয়ানকে স্বাগত জানাচ্ছেন শাহবাজ শরিফ
পার্স টুডে – পাকিস্তানে পেজেশকিয়ানের সফর কেবল তেহরানের সক্রিয় কূটনীতির প্রতীকই নয়, একইসঙ্গে তা এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে ইরানের ভূমিকারও লক্ষণ হতে পারে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান একটি উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল সঙ্গে নিয়ে ইসলামাবাদে পৌঁছেছেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইরানি প্রতিনিধিদলের আগমনের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত রেজা আমিরি-মোকাদ্দাম মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং তার সাথে আসা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের স্বাগত জানান।
পাকিস্তানে পেজেশকিয়ানের সরকারি সফরকে তেহরান ও ইসলামাবাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সফরকালে দুই দেশের নেতারা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা করবেন।
ইরানের রাষ্ট্রপতি ২রা আগস্ট, শনিবার লাহোরে পৌঁছান এবং আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল লাহোরির মাজার জিয়ারতের পর তিনি ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। লাহোরে আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের সমাধিতে পেজেশকিয়ানের সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই বিষয়টি সব সময়ই ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতার প্রতীক। আর এই সাংস্কৃতিক কূটনীতি পাক-ইরান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে প্রেরণার ভিত্তিমূল বা পটভূমি হিসেবে কাজ করবে।
গাজা, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আগ্রাসনের পরিণতিসহ বর্তমান আঞ্চলিক উন্নয়ন বিষয়ে মত বিনিময়ও ইরানি প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার অংশ হবে। এছাড়াও, তেহরানে ইরান-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের একটি বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনাও পক্ষগুলির এজেন্ডায় রয়েছে।
এই সফরটি গত এক বছরে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে পঞ্চম আনুষ্ঠানিক বৈঠক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের তেহরানে যৌথ সফরের মাত্র দুই মাস পরে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে পেজেশকিয়ান এবং শাহবাজ শরীফের মধ্যে প্রায়ই ফোনালাপ হয়েছে। বিষয়টা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও গভীর করার জন্য উভয় পক্ষের আন্তরিক ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়। এই সফর কেবল ইরান ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ক্যালেন্ডারেই নয়, একইসঙ্গে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রপতির পাকিস্তান সফর অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক ক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে তেহরান-ইসলামাবাদ সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পথে একটি সন্ধিক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সফর অভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলির মধ্যে ঐক্য এবং সাধারণ আঞ্চলিক কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টারও প্রতীক। ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার কেবল এ দুই দেশের স্থিতিশীলতাই নয়, একইসঙ্গে সমগ্র অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও অবদান রাখবে।
আমেরিকার হস্তক্ষেপমূলক নীতির ফলে এই অঞ্চলটি অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি। এমন পরিস্থিতিতে ঘনবসতিপূর্ণ ও দীর্ঘ সীমান্তসহ দুটি মুসলিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা মুসলিম বিশ্বে কার্যকর এবং গঠনমূলক লেনদেন ও যোগাযোগের একটি মডেল হতে পারে।
এই সফরকালে দুই দেশের নেতারা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ, আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমন্বয় বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করবেন। ইরান ও পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৮তম বর্ষপূর্তিতে পৌঁছেছে এবং এই সফর এই সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য পক্ষগুলোর জোরালো ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাইরেও বিস্তৃত এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন এবং অভিন্ন হুমকি মোকাবেলায় কৌশলগত স্তম্ভ হিসেবে কাজ করতে পারে।পাকিস্তান এই অঞ্চলে শান্তি সুসংহত করার জন্য ইরানের সাথে একটি স্থায়ী অংশীদারিত্ব চায় এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতার উপর জোর দেয়। সন্ত্রাসবাদ, চোরাচালান এবং সীমান্ত নিরাপত্তাহীনতার মতো অভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে উভয় দেশই অভিন্ন নিরাপত্তা কৌশলগুলো অনুসরণ করছে।
গাজার ঘটনাবলী এবং ইহুদিবাদী সরকারের আগ্রাসনের বিষয়ে তেহরান ও ইসলামাবাদও অভিন্ন এবং সহায়ক অবস্থান গ্রহণ করেছে যা রাজনৈতিক ও আদর্শিক সমমুখিতার ইঙ্গিত দেয়।
ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা কেবল দুই দেশের জন্যই লাভজনক তা নয়, তা সমগ্র অঞ্চলের জন্যও লাভজনক। এই সহযোগিতা মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যের জন্য একটি মডেল, আন্তঃআঞ্চলিক হুমকি মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করার জন্যও আদর্শ। মোটকথা ইরান-পাকিস্তান সহযোগিতার সম্পর্ক এই অঞ্চলের দেশগুলির জন্য উজ্জ্বল দিশারী হতে পারে। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/০৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।