ককেশাস অঞ্চলে হস্তক্ষেপমূলক নানা প্রকল্প রোধে ইরানের কৌশলগত অবস্থা কী?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i150976-ককেশাস_অঞ্চলে_হস্তক্ষেপমূলক_নানা_প্রকল্প_রোধে_ইরানের_কৌশলগত_অবস্থা_কী
পার্সটুডে - জাংজুর করিডোর প্রকল্প, যা কিছু আন্তঃআঞ্চলিক শক্তির সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে, দৃশ্যত নাখচিভানকে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি ট্রানজিট প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবে, ইরান মনে করে এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক হুমকি যার ব্যাপক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে।
(last modified 2025-08-08T06:38:34+00:00 )
আগস্ট ০৬, ২০২৫ ১৭:৫০ Asia/Dhaka
  • • ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়াতি
    • ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়াতি

পার্সটুডে - জাংজুর করিডোর প্রকল্প, যা কিছু আন্তঃআঞ্চলিক শক্তির সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে, দৃশ্যত নাখচিভানকে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করার জন্য একটি ট্রানজিট প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবে, ইরান মনে করে এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক হুমকি যার ব্যাপক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে।

"জাংজুর করিডোর" প্রকল্প ফের সামনে আসায় এর পরিণতির ব্যাপারে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়াতি কিছু আঞ্চলিক এবং আন্তঃআঞ্চলিক সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন। ইরান তার নিজস্ব এবং সমগ্র এ অঞ্চলের স্বার্থের প্রতি উদাসীন নয় উল্লেখ করে বেলায়াতি ঘোষণা করেছেন যে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে অবৈধ লক্ষ্য অর্জনের যে কোনও প্রচেষ্টা ইরানের কাছ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন: "এই অঞ্চলের বা এর বাইরের যেকোনো সরকার যদি পূর্ববর্তী ব্যর্থ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করতে চায়, তাহলে তারা ইরানের কাছ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে।"

এই পরিকল্পনার প্রতি ইরানের বিরোধিতা একটি সাধারণ সীমান্ত বিরোধের বাইরেও গভীর ভূ-রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং ঐতিহাসিক উদ্বেগের কারণে। দক্ষিণ ককেশাসে বিশেষ অবস্থানের কারণে, ইরান সর্বদা আঞ্চলিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছে। সিউনিক প্রদেশের মাধ্যমে আর্মেনিয়ার সাথে স্থল যোগাযোগ হল ইউরোপীয় এবং ককেশাসীয় বাজারে ইরানের প্রবেশের একমাত্র উপায়। আর্মেনিয়ান তত্ত্বাবধান ও অনুমতি ছাড়া জাঙ্গেজুর করিডোর বাস্তবায়ন করলে এই পথটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং ইরানকে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।

ইরান এই অঞ্চলে পরিবহন ও যোগাযোগ রুট খোলার নীতির বিরোধিতা করে না, তবে এট হতে হবে আর্মেনিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইরানের স্বার্থকে হুমকির মুখে না ফেলার শর্তে। জাংজুর করিডোর একটি ট্রানজিট রুটের চেয়েও বেশি কিছু, কারণ এটি একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রকল্প যার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি আন্তঃ-আঞ্চলিক হস্তক্ষেপকামী নকশা রয়েছে। এ অবস্থায় ইরান আর্মেনিয়ার সাথে সম্পর্ক জোরদার, যৌথ বিনিয়োগ এবং সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রেখে তার স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী জাংজুর করিডোর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, এ অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবর্তন করতে পারে, অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং যৌথ আমেরিকান-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র গঠনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করতে পারে।

"জাংজুর করিডোর" প্রকল্পের ব্যাপারে, ইরান এমন লক্ষ্য এবং কর্মসূচি অনুসরণ করে যা মূলত তার জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং এ অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান স্থিতিশীল রাখার উপর গুরুত্ব দেয়। মার্কিন জাংজুর করিডোর প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য, ইরান কর্তৃক কূটনৈতিক কৌশল প্রস্তাব করা হয়েছে যা জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ইরান ও এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থান উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

এই পরিকল্পনাগুলির মধ্যে রয়েছে বিকল্প রুট তৈরি এবং ইরানের সিস্তান ও বালুচেস্তান প্রদেশের চাবাহার বন্দর, গিলান প্রদেশের আনজালি বন্দর এবং মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার সাথে রেল রুট দিয়ে ট্রানজিট রুটে বিনিয়োগ। ইরানের অর্থনৈতিক লক্ষ্য এবং পরিকল্পনার আরেকটি বিষয় হবে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য বাণিজ্য ও যৌথ বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করা এবং জাংজুর করিডোরের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাণিজ্য সহজতর করার জন্য আর্মেনিয়ার সাথে নর্দুজ সীমান্তে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার যোগাযোগ ও পরিবহন অবকাঠামোতেও ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যার ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিমে রেল ও সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন হয়েছে এবং পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকস গ্রুপে ইরানের সদস্যপদ লাভের ফলে, রাশিয়া, ভারত এবং চীনের সাথে সম্পৃক্ততা এবং অর্থনৈতিক জোট তৈরি করা ককেশাসে আমেরিকান-পশ্চিমা অক্ষের প্রভাবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (ECO) সক্ষমতা ব্যবহার করে আঞ্চলিক ঐক্য তৈরি করাও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ইরানের পরিকল্পনার অংশ ।#

পার্সটুডে/এমআরএইচ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।