আন্দিমেশকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিরস্ত্র এক পরিবারের শাহাদাতের গল্প
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i153124-আন্দিমেশকে_ইসরায়েলি_ড্রোন_হামলায়_নিরস্ত্র_এক_পরিবারের_শাহাদাতের_গল্প
পার্সটুডে: ইরান-ইরাক যুদ্ধের বছরগুলোতে যুদ্ধের আগুন বারবার উত্তাপ ছড়িয়েছিল খুজেস্তান প্রদেশের আন্দিমেশক শহরের নিস্তব্ধ দুকুহেহ অঞ্চলে। সেখানেই গত ২০ জুন (শুক্রবার) ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন সাইয়্যেদ গোলাম আব্বাস মুসাভি।  
(last modified 2025-10-18T11:50:08+00:00 )
অক্টোবর ১৭, ২০২৫ ১৬:৩৫ Asia/Dhaka
  • শহীদ সাইয়্যেদ গোলাম আব্বাস মুসাভি তার ছেলের সাথে
    শহীদ সাইয়্যেদ গোলাম আব্বাস মুসাভি তার ছেলের সাথে

পার্সটুডে: ইরান-ইরাক যুদ্ধের বছরগুলোতে যুদ্ধের আগুন বারবার উত্তাপ ছড়িয়েছিল খুজেস্তান প্রদেশের আন্দিমেশক শহরের নিস্তব্ধ দুকুহেহ অঞ্চলে। সেখানেই গত ২০ জুন (শুক্রবার) ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় সপরিবারে শাহাদাতবরণ করেন সাইয়্যেদ গোলাম আব্বাস মুসাভি।  

হামশাহরি অনলাইনের বরাত দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, আন্দিমেশক শহরের দুকুহেহ'র এই নিপীড়িত পরিবার তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের আবহে থাকার মধ্যেই এক সহিংস হামলার শিকার হয়। শহীদ গোলাম আব্বাস মুসাভির ২৯ বছর বয়সী ভাতিজা বাহার মুসাভি, যিনি শৈশবে তার বাবা শহীদ সাইয়্যেদ আহমদ মুসাভিকে হারিয়েছিলেন এবং এখন তার চাচা ও তার পরিবারের শোকে কাতর। তিনি বলেন:

"আমি আমার মাকে ৯ মাস বয়সে হারাই এবং ১৯৯৮ সালে আমার বাবা দুকুহেহ অঞ্চলে একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে শহীদ হন। তারপর থেকে আমি আমার দাদির বাড়িতে থাকতাম এবং চাচা গোলাম আব্বাস আমার কাছে বাবার মতো ছিলেন। আমার চাচা প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ের পরে যাযাবর জীবনধারা বেছে নিয়েছিলেন। তাদের জীবন এমন ছিল যে গ্রীষ্ম মৌসুমে তারা খোররমাবাদে চলে যেত এবং শীতের মৌসুমে আন্দিমেশক শহরের তাঙ্গভান এলাকায় যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতেন, যা দুকুহেহ থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কৃষিকাজ ও পশুপালনের পাশাপাশি তারা মাঝে মাঝে একটি বাগান এবং তার পাশের কূপের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিতেন।"

“আমার ছোট ভাই শহীদ হলো”

৪১ বছর বয়সী গোলাম-আব্বাস মুসাভি, তাঁর স্ত্রী সিয়াহগিস মুসাভি এবং তাঁদের আট বছর বয়সী পুত্র আরমিন—এ বছর আগের মতো খোররামাবাদে যাননি। তাঁরা তাঙ্গুয়ানে থেকে কাছের একটি লেবুর বাগান ও পানির কূপ পাহারা দিচ্ছিলেন।

বাহার সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে:

“এলাকাটি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, প্রায় ফ্রন্টলাইনের মতো। তবুও তারা আমাদের সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করেছিল, বলেছিল— নিজেদের ঘরেই থাকতে চায়। শুক্রবার বিকেলে চাচা দাদীর সঙ্গে ফোনে কথা আলাপকালে জানান: ‘মা, কাল সকালে ব্যাংকে একটা কাজ আছে, তোমাদের দিকে আসছি।’ ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ চলে যায়। দশ মিনিটও যায়নি, বড় এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। তারপর গ্রামের এক লোক আমার বড় চাচাকে ফোন করে জানায়—‘কূপটা উড়ে গেছে।’ তখনই বুঝলাম চাচা, চাচী আর ছোট ভাই আরমিন শহীদ হয়েছেন।”

শেষ সাক্ষাৎ

বাহার শেষ দেখা হওয়ার মুহূর্তের কথা বর্ণনা করেন এভাবে:

"শেষবার চাচাকে দেখেছিলাম, যখন তিনি দরজায় এসে আরমিন আর চাচীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। চাচা খুব তৃষ্ণার্ত ছিলেন। আমি যখন তাঁর জন্য এক গ্লাস পানি দিলাম, তাঁর মুখে এক অদ্ভুত আলো দেখলাম—চোখে ঝিলিক ছিল। আশ্চর্যের বিষয়, চাচীও যাওয়ার সময় ফিরে তাকালেন এবং বললেন: ‘আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ আমরা আরমিনকে অনেক বুঝিয়েছিলাম যেন যুদ্ধের এই দিনগুলোতে আমাদের কাছেই থাকে, কিন্তু সে যেতে জেদ করেছিল।”

বাহার আরমিনের জন্য তার ভালোবাসা ও আফসোসের সাথে স্মরণ করেন:

"যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরমিন তার স্কেচবুকে রকেটের ছবি আঁকত। যখন রকেট নিক্ষেপের শব্দ শোনা যেত, সে জোরে 'ইয়া আলি' এবং 'মৃত্যু ইসরাইলের উপর' বলত।"#

পার্সটুডে/এমএআর/১৮