প্যারিসের লুভ্‌র জাদুঘরের অনুচররা ইরান থেকে চুরি করেছিল যেসব ঐতিহাসিক নিদর্শন
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i153490-প্যারিসের_লুভ্_র_জাদুঘরের_অনুচররা_ইরান_থেকে_চুরি_করেছিল_যেসব_ঐতিহাসিক_নিদর্শন
পার্স-টুডে: ইরানের ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন প্যারিসের লুভ্‌র জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, সন্দেহজনক ক্রয়-বিক্রয় এবং কখনও কখনও ইরানের রাজনৈতিক দুর্বলতার সময় লুটপাটের ফলে এইসব নিদর্শন বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
(last modified 2025-10-28T13:53:51+00:00 )
অক্টোবর ২৮, ২০২৫ ১৮:০৮ Asia/Dhaka
  • প্যারিসের লুভ্‌র জাদুঘরে ইরানের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন
    প্যারিসের লুভ্‌র জাদুঘরে ইরানের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন

পার্স-টুডে: ইরানের ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন প্যারিসের লুভ্‌র জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, সন্দেহজনক ক্রয়-বিক্রয় এবং কখনও কখনও ইরানের রাজনৈতিক দুর্বলতার সময় লুটপাটের ফলে এইসব নিদর্শন বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

পশ্চিমারা ইরানের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে গেছে পাশ্চাত্যে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, সন্দেহজনক ক্রয়-বিক্রয় এবং কখনও কখনও ইরানের রাজনৈতিক দুর্বলতার সময় লুটপাটের ফলে এইসব নিদর্শন বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অঙ্গনের একটি আলোচিত সংকট। 

উনিশ ও বিংশ শতাব্দীতে, অনেক পশ্চিমা কর্মকর্তা ইরান থেকে পুরাকীর্তি অপসারণ বা চুরি করার জন্য কখনও কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়েছেন, কখনও প্রত্নতাত্ত্বিক খননের অনুমতি নিয়েছেন এবং বৈজ্ঞানিক-গবেষণার অজুহাত ব্যবহার করেছিলেন। দুর্বল আইনি কাঠামো, নজরদারির অভাব, বিশেষ করে ইরানের কাজার ও পাহলাভি শাসকদের উদাসিনতার কারণে এইসব ঐতিহাসিক নিদর্শন পাচার হয়ে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। 

দারিয়ুশ প্রথমের প্রাসাদের স্তম্ভগুলোর অগ্রভাগ যা আখামেনিড বা হাখামানেশিয় শাসনামলের সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শনগুলোর অন্যতম তা দক্ষিণ ইরানে অবস্থিত শুষ শহরের ঐতিহাসিক নিদর্শনের স্থান থেকে প্যারিসের লুভর জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের প্রাচীন সভ্যতার কিউনিফর্ম বা কিলক-লিপির ট্যাবলেট সহ ‌ইলামাইট বা ইলামিয় এবং আক্কাদিয়ান শিলালিপিগুলোও লুভর জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। আচেমেনিড ধনুর্বিদদের বেস-রিলিফ তথা পাথরে স্ফীতভাবে ফুটিয়ে তোলা চিত্রগুলো যা আচেমেনিড বা হাখামানেশিয় দরবারের শৈল্পিক এবং সামরিক দক্ষতা প্রদর্শনের নিদর্শন, সেগুলো প্রাচীন ইরানি যুগের চুরি-হয়ে-যাওয়া ঐতিহাসিক শিল্পকর্মগুলোর অন্যতম।

লুভরের ইরানি অংশটি প্রাচীন ইরানি সভ্যতার এক অমূল্য সম্পদ, যা গর্বের উৎস হলেও, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অবহেলা এবং বিদেশী শক্তির প্রভাবের যুগের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ, এই শিল্পকর্মগুলো ইরানে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে তাদের বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক এবং আইনি ইচ্ছাশক্তি থাকা জরুরি। 

আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে, পুরাকীর্তি চুরি এবং পাচারকে জাতিগুলির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর অধীনে শাস্তিযোগ্য। ১৯৭০ সালের ইউনেস্কো কনভেনশন হল সাংস্কৃতিক সম্পত্তির পাচার এবং অবৈধ স্থানান্তর প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিল। এই আইন অনুযায়ী দেশগুলোকে পুরাকীর্তিগুলোর অবৈধ রপ্তানি রোধ করতে হবে এবং আবিষ্কৃত হলে, সেগুলি উৎপত্তিস্থলে ফেরত পাঠাতে হবে।

এমনকি কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তির অভাবে, জাতিগুলোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মান করার এবং এর লুণ্ঠন রোধ করার নীতিটি একটি আন্তর্জাতিক নিয়ম হিসাবে গৃহীত হয়েছে। ইরান ১৯৭০ সালের ইউনেস্কো কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ইন্টারপোল এবং ইউনেস্কোর সহযোগিতায় কিছু নিদর্শন ফেরত আনতে সফল হয়েছে।

স্থানান্তরিত অনেক নিদর্শন পশ্চিমা জাদুঘরে, যেমন লুভর, মেট্রোপলিটন এবং ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এবং এগুলো ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে। ইরান ও অন্য অনেক দেশ ঐতিহাসিক নিদর্শন ফেরত আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্য জাতির ঐতিহাসিক নিদর্শন রেখে দেয়ার পদক্ষেপগুলোকে এখন সংশ্লিষ্ট জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিংশ শতাব্দীতে ইরানের পুরাকীর্তি বিদেশে স্থানান্তর সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের একটি দৃষ্টান্ত যা কেবল জাতীয় ঐতিহ্যকেই হুমকির মুখে ফেলেনি, একইসঙ্গে জাতিগুলোর ঐতিহাসিক পরিচয়কেও প্রভাবিত করেছে। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।