মার্কিন খ্রিস্টানদের ধোঁকা দিতে ইসরায়েল যেভাবে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের অপব্যবহার করছে
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152434-মার্কিন_খ্রিস্টানদের_ধোঁকা_দিতে_ইসরায়েল_যেভাবে_ইতিহাস_ও_প্রত্নতত্ত্বের_অপব্যবহার_করছে
পার্স টুডে - গবেষকদের মতে, ইহুদিবাদী ‌ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও তার মার্কিন সমর্থকরা এমন ঐতিহাসিক আখ্যানের লেবেল লাগিয়ে বানোয়াট কল্প-কাহিনী প্রচারের চেষ্টা করছে যা মূলত আমেরিকান খ্রিস্টানদের প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫ ১৫:৩২ Asia/Dhaka
  • আমেরিকান খ্রিস্টানদের ধোকা দিতে ইসরায়েল যেভাবে প্রত্নতত্ত্ব ব্যবহার করে
    আমেরিকান খ্রিস্টানদের ধোকা দিতে ইসরায়েল যেভাবে প্রত্নতত্ত্ব ব্যবহার করে

পার্স টুডে - গবেষকদের মতে, ইহুদিবাদী ‌ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও তার মার্কিন সমর্থকরা এমন ঐতিহাসিক আখ্যানের লেবেল লাগিয়ে বানোয়াট কল্প-কাহিনী প্রচারের চেষ্টা করছে যা মূলত আমেরিকান খ্রিস্টানদের প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি জেরুজালেম তথা মুসলমানদের প্রথম কেবলা আল-আকসা মসজিদ সংলগ্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন। তার ইসরায়েলি মেজবান বা সফরের আয়োজকরা খুব সতর্কতার সাথে এমনভাবে এই ভ্রমণ বা সফরের পরিকল্পনা করেছে যেখানে  সর্বোপরি প্রত্নতত্ত্বের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গার্ডিয়ানের বরাত দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, প্রথম দিনেই বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাকে পশ্চিম প্রাচীরের কাছে ভূগর্ভস্থ খনন-প্রকল্পে নিয়ে যান।

দ্বিতীয় দিনে, নেতানিয়াহু গর্বের সাথে আমেরিকান অতিথিদেরকে প্রাচীন যুগের কথিত "সিটি অফ ডেভিড" পার্কের "পিলগ্রিমেজ রোড" নামে পরিচিত একটি রোমান যুগের রাস্তার পাশে নিয়ে যান। যা আবিষ্কার করা হয়েছে ফিলিস্তিনি পাড়ার নীচে সুড়ঙ্গ খননের মাধ্যমে। অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সংস্থা এল-আদ কথিত সিটি অফ ডেভিড পার্ক পরিচালনা করে। 

নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন যে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেমের ইহুদি শিকড় এবং ইসরায়েলের "চিরন্তন ও অবিভক্ত রাজধানী" হিসেবে এর অবস্থান তুলে ধরা। কিন্তু রুবিও যখন ঐতিহাসিক সফরে ছিলেন, তখন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজার প্রধান পুরাকীর্তি ডিপোতে বোমা হামলা চালায়, যার ফলে ত্রিশ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রচেষ্টা ধ্বংস হয়ে যায়।

ইতিহাস নিয়ে যুদ্ধ

ঐতিহাসিক আখ্যান নিয়ে বিরোধ সব সময়ই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বিস্তৃত দ্বন্দ্বের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের কথিত পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা অধিকৃত অঞ্চলে পুরাকীর্তি অনুসন্ধানের কাজে দখলদার বাহিনীকে সাথে নেন। কিন্তু গত মাসে এই দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রুবিওর এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল রিপাবলিকান পার্টির ইভাঞ্জেলিকাল ঘাঁটিকে ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত করা, ইহুদি-খ্রিস্টান ইতিহাসের ওপর জোর দেয়া।

নেতানিয়াহু এবং রুবিও, তাদের স্ত্রীদের সাথে ছিলেন মাইক হাকাবি, একজন ইভাঞ্জেলিকাল পাদ্রি এবং ইসরায়েলে নিযুক্ত বর্তমান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ইসরায়েলি সম্প্রসারণের একজন কট্টর সমর্থক হাকাবি বিশ্বাস করেন যে "ফিলিস্তিন বলে কিছু নেই।"
 

সস্ত্রীক নেতানিয়াহু এবং রুবিও

 

বিতর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্প

সিলওয়ান এলাকায় বাজেয়াপ্ত ফিলিস্তিনি জমিতে ডেভিড সিটি প্রত্নতাত্ত্বিক পার্ক প্রতিষ্ঠাকারী এল-আদ বসতি স্থাপন সংস্থা, যীশু খ্রিস্টের সময় ইহুদিরা মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য যে পথটি ব্যবহার করত তা হল প্রিলগিমেজ রোড বা তীর্থযাত্রা সড়ক।
জাতিসংঘ কর্তৃক এই প্রকল্পটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে কারণ এটি অধিকৃত অঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তা করা হচ্ছে। গত বছর, জাতিসংঘের একটি কমিশন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রত্নতত্ত্ব ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের স্বাধীন দল "আমেক শাভেহ"-এর প্রধান অ্যালন আরাদ বলেছেন যে, জিয়ারাত রোড টানেলটি এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে ইসরায়েলে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান একটি প্রাচীর ভেঙে খুলেছিলেন।

আরাদ এই ঘটনাটিকে "সম্পূর্ণ অদ্ভুত" বলে বর্ণনা করেছেন, আরও বলেছেন: "এটা নতুন কিছু নয় যে বসতি স্থাপনকারী, ধর্মীয় মিশনারি এবং আমেরিকান ডানপন্থীরা একে অপরের সাথে একত্রিত। কিন্তু এই ঘটনাটি কেবল দুর্বল প্রত্নতত্ত্ব এবং এটি দেখায় যে ডেভিড পার্ক সিটি প্রকল্পের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই।"

গাজার ঐতিহ্য ধ্বংস

আমেক শাওয়া গাজার প্রত্নতাত্ত্বিক ডিপোতে ইসরায়েলের বোমা হামলারও নিন্দা করেছেন যেদিন রুবিও কথিত পশ্চিম প্রাচীর পরিদর্শন করছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল শত শত সাংস্কৃতিক স্থান এবং সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ধ্বংস করেছে। গাজায় ত্রিশ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের সংরক্ষণকারী গুদামটিতে কয়েক হাজার নিদর্শন ছিল, যার মধ্যে অনেকগুলো আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি প্রত্নতাত্ত্বিকদের এবং ইকোল বিবলিককে গুদামটি খালি করার জন্য মাত্র তিন দিন সময় দিয়েছিল, কিন্তু সমস্ত নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সম্পদ ছিল না। ইকোল বিবলিকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন: "ট্রাক ও জনবলের অভাবের কারণে, আমরা দ্বিতীয়বার ফিরে আসতে পারিনি এবং কিছু নিদর্শন ধ্বংস হয়ে গেছে।"

প্রত্নতত্ত্বের রাজনৈতিক আখ্যান

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করার দাবি করে এটিকে "গাজার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরল নিদর্শন এবং মৃৎশিল্পের স্থানান্তর" হিসাবে বর্ণনা করেছে। কিন্তু আরাদ বলছেন যে নিদর্শনগুলো বিভিন্ন যুগ এবং সভ্যতার অন্তর্গত, এবং ইসরায়েলিদের এই বর্ণনা বাস্তবতার বিকৃতি। তিনি আরও বলেন, "আমি জানি না এই দাবির প্রেরণা কী, তবে এটি সম্ভবত আমেরিকার ইভাঞ্জেলিক গির্জার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার একটি প্রচেষ্টা।"

এই ঘটনাগুলো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে প্রত্নতত্ত্বের হাতিয়ার ব্যবহারের প্রমাণ। এ এমন একটি প্রক্রিয়া যা কেবল অঞ্চলের সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাসকেই উপেক্ষা করে না, একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস ও সংঘাত বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।