‘ডিজিটাল ইরান’ পরিকল্পনা: ৫ লাখ আইটি বিশেষজ্ঞ গড়ে তোলার উদ্যোগ
-
ইরান সরকার দেশকে আঞ্চলিক আইসিটি–হাব হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
পার্সটুডে : তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে ইরান সরকার বেসরকারি খাতের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ, বিনিয়োগ–বাধা দূরীকরণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার নিরাপত্তার মতো উদীয়মান প্রযুক্তিতে কেন্দ্রীয় মনোযোগ দিচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ডিজিটাল সেক্টর দেশগুলোর উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। ইরানেও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কেন্দ্রে রেখে দেশের অর্থনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ইরানের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে “যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ” শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে ডিজিটাল অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করতে ও বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।
ডিজিটাল জাম্প: সপ্তম উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু
জাতীয় সম্মেলনে ইরানের প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেন, 'ইরানের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ ডিজিটাল'। তিনি তথ্যপ্রযুক্তিকে আলাদা কোনো খাত নয়, বরং জ্বালানি, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সব অর্থনৈতিক খাতের রূপান্তরের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন।
আরেফ জানান, দেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা ও মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে ইরান গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বেসরকারি খাত এমনকি সাইবার নিরাপত্তার মতো সংবেদনশীল ক্ষেত্রেও কার্যকরভাবে অংশ নিতে পারে। পাশাপাশি দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: ভবিষ্যতের প্রধান চালিকা শক্তি
আরেফ বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সরকারে এআই উন্নয়ন সদরদপ্তর গঠন করা হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দেশগুলো ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তিনি এআই–কেন্দ্রিক অবকাঠামো যেমন ডেটা সেন্টার ও ৫জি নেটওয়ার্কে বড় বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশ্বে ডিজিটাল অর্থনীতি ও ইরানের অবস্থান
ইরানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নীতি–প্রণয়ন ও উন্নয়নবিষয়ক উপমন্ত্রী এহসান চিতসজ বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতিই আজ বিশ্বের একমাত্র খাত যেখানে বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি জানান, বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির মোট বিনিয়োগের প্রায় ৬০ শতাংশই হচ্ছে চীনে এবং মাত্র এক বছরে ডেটা সেন্টার খাতে বিনিয়োগ তিনগুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, নতুন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ইরানও ডিজিটাল অর্থনীতির মূল খাতে বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন নীতি
চিতসজ জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘বিনিয়োগ নির্দেশিকা’ তৈরি করা হয়েছে এবং সম্মেলনেই কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তার বক্তৃতায় উঠে আসে- সরকারের ভূমিকা এখন সরাসরি পরিচালনা নয়, বরং নীতিনির্ধারণ ও সুবিধা প্রদান। সব প্রকল্প আগে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই কিনা তা মূল্যায়ন করা হবে, এরপর বেসরকারি খাতকে যুক্ত করা হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির জ্বালানি–খাতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনাও তিনি তুলে ধরেন।
নবায়ন–পরিবেশ শক্তিশালীকরণ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন
ইরানের বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হোসেইন সিমায়ি সাররাফ বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতিতে দেশের অংশীদারিত্ব বাড়াতে বিজ্ঞান পার্ক ও জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। এদিকে, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগমন্ত্রী সাইয়্যেদ সত্তার হাশেমি ঘোষণা করেছেন, জাতীয় প্রকল্প ‘ডিজিটাল ইরান’–এর আওতায় ৫ লাখ আইটি বিশেষজ্ঞ তৈরি করা হবে, যা দেশের উদ্ভাবনী পরিবেশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
ডিজিটাল জাম্পের দ্বারপ্রান্তে ইরান
ইরান সরকার দেশকে আঞ্চলিক আইসিটি–হাব হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই লক্ষ্য অর্জনের মূল ভিত্তিগুলো হলো—
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় অগ্রগতি
- ডিজিটাল অবকাঠামোর সম্প্রসারণ
- দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ
- আইনি কাঠামোর সংস্কার
- দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি
এই রূপান্তর সফল করতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, সব খাতের সমন্বিত অংশগ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন।#
পার্সটুডে/এমএআর/৪