যুদ্ধ, রক্তপাত ও গণহত্যা কেবল আমেরিকা ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করছে: শামখানি
(last modified Tue, 03 Dec 2019 09:34:12 GMT )
ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯ ১৫:৩৪ Asia/Dhaka
  • শামখানির সঙ্গে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত
    শামখানির সঙ্গে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাভি তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এ সাক্ষাতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। গত নয় মাসে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটা তৃতীয় সফর।

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন সময় ইরান সফরে এলেন যখন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচিও চীন সফর শেষ করে গতকাল জাপানে গেছেন। দু'দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে পশ্চিম এশিয়ায় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং পরমাণু সমঝোতা রক্ষার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। টোকিও বৈঠকে আব্বাস আরাকচি বলেছেন, "অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোই পারে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।"

এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি নয়া জোট গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর ঘটনাবলীতে জড়িত সব দেশকে একটি জোট গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি যার নাম হতে পারে ‘কোয়ালিশন অব হোপ’ বা ‘প্রত্যাশার জোট’। এই জোট হরমুজ প্রণালীসহ এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট রুহানির ওই প্রস্তাব এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ অঞ্চলের যে কোনো সমস্যার সমাধান এ দেশগুলোর মাধ্যমেই হতে হবে। কারণ যারা বাইরে থেকে এসেছে তারা কখনোই শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় না। আমেরিকা ২০০১ সাল থেকে এ অঞ্চলে অবস্থান করছে কিন্তু তারা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানিও তেহরানে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাভিকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি পারস্য উপসাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে আন্তর্জাতিক জোট গঠনের জন্য মার্কিন ব্যর্থ প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "আমেরিকার মতো বেশ কিছু দেশ যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটিয়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে নৈরাজ্য ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং তারা কেবল এ অঞ্চলের সম্পদ লুট ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে।"

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া সাক্ষাতে শামখানি আরো বলেছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে অব্যাহত আগ্রাসন থেকে বোঝা যায়, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ও এ অঞ্চলে তাদের মিত্ররা এ অঞ্চলে যুদ্ধের বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ, রক্তপাত ও গণহত্যা আমেরিকা ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, "সৌদি আরবের উচিত ইয়েমেনের প্রতিরোধকামী জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং এ অঞ্চলকে আর সংঘাতের দিকে ঠেলে না দেয়া।"  

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হাসান হানিযাদে বলেছেন, এ অঞ্চলের সংঘাত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের সুযোগ এনে দিয়েছে। মার্কিন সামরিক উপস্থিতি পারস্য উপসাগরের দুই উপকূলেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

ইরান সফরে এসে ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাভি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে তেহরান-মাস্কাটের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও বিরাজমান ভুলবোঝাবুঝির অবসান হওয়া উচিত। আর বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনে গঠনমূলক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতেও তার দেশ প্রস্তুত বলে তিনি জানান।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩

ট্যাগ