বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ে অনন্য সাফল্য
(last modified Wed, 04 Dec 2019 13:21:29 GMT )
ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯ ১৯:২১ Asia/Dhaka
  • বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় ইরান
    বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় ইরান

নাসির মাহমুদ: বন্ধ্যাত্বের সফল চিকিত্সার জন্য ইরানের কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টার সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বেই ব্যাপক সুপরিচিত। বিশেষ করে আহওয়াজ প্রদেশে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি গবেষণা ও চিকিত্সা কেন্দ্র রয়েছে। এগুলোতেও বন্ধ্যাত্ব চিকিত্সার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন সেবা দেওয়া হয়।

এইসব চিকিৎসাকেন্দ্রে অসামান্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন। তার পাশাপাশি রয়েছে মৌসুমি পরিবর্তনের উপভোগ্য বৈচিত্র্য এবং পর্যটক আকর্ষণীয় নানা আয়োজনও। আবহাওয়াগত ভিন্নতার পাশাপাশি গরম এবং ঠাণ্ডা ঝরনাও রয়েছে উপভোগ করার মতো। ইয়াজদ প্রদেশের চিকিত্সা পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে এইসব বৈশিষ্ট্য দারুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।  অবশ্য বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইরানের আরও বহু প্রদেশে চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে।

বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ে ইরান

ইরানের রাজধানী শহর তেহরানে তো বটেই এর বাইরেও শিরাজ প্রদেশ, মাশহাদ প্রদেশ, কোম এবং কেরমানশাহ প্রদেশেও রয়েছে উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্র ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সুসজ্জিত বহু ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক এবং মেডিক্যাল সেন্টারে বন্ধ্যাত্বেরও চমৎকার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। এ কারণে প্রায় সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির চিকিৎসার জন্য বিশেষ করে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে স্বাস্থ্য পর্যটকরা সেবা নিতে আসেন ইরানে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো জার্মানি, তুরস্ক, ইরাক, অস্ট্রিয়া, আজারবাইজান, ইতালি এবং আর্মেনিস্তান ইত্যাদি। বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় বিশ্বের উন্নত দশটি দেশের মধ্যে ইরান একটি। ইরানে 'রুয়ন গবেষণাকেন্দ্র' নামে একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশেষ করে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা এবং মূলকোষ বা স্টেমসেল গবেষণার ক্ষেত্রে নামকরা একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এটি।

বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ে ইরানের সাফল্য

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে রুয়ন চিকিৎসা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা দেওয়া এবং এ নিয়ে গবেষণা চালানোর জন্য। গত এক দশক ধরে এই কেন্দ্রে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ইতিমধ্যে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার স্বার্থে আরও তিনটি গবেষণাকেন্দ্র এবং দুটি স্পেশালাইজড ক্লিনিক গড়ে তুলেছে।  অন্তসত্ত্বার পরিমাণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ব্যাপক। ভ্রূণের সুস্থতা এবং সামাজিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রুয়নের রয়েছে বহুমুখি প্রকল্প। বন্ধ্যাত্ব নিয়ে গবেষণার মতো আরও বিচিত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও বহু রকমের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রুয়ন। ইরানের বন্ধ্যা দম্পতির চিকিৎসার বাইরেও এখানে চিকিৎসা নিয়েছে বিশ্বের বহু দেশের নি:সন্তান দম্পতিও। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে ইরাক, বাহরাইন, তুরস্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ইতালি, কানাডা এবং আমেরিকার মতো অন্তত বিশটি দেশের নাম।  

রয়ন ইনস্টিটিউট

বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে সক্রিয় আরও একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হলো 'ইবনে সিনা' গবেষণা কেন্দ্র। নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসায় ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে এই গবেষণা কেন্দ্রটি। ইবনে সিনা মেডিক্যাল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মুহাম্মাদ মাহদি অখুন্দি মনে করেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো বন্ধ্যাত্বের নিরাময়। বিশ্বব্যাপী যদিও বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা ব্যাপক তারপরও বিগত কয়েক দশকে এক্ষেত্রে অনেক উন্নতি এবং অগ্রগতিও অর্জিত হয়েছে। ইরানও বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ের ক্ষেত্রে মূল্যবান জ্ঞান-গবেষণা ও প্রযুক্তি অর্জন করেছে। এখন অসংখ্য নি:সন্তান দম্পতি সন্তান লাভের জন্য সফল চিকিৎসার ব্যাপারে আশাবাদ পোষণ করতে পারে।

ইবনে সিনা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা কেন্দ্র

ড. অখুন্দি আরও বলেন, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসাটা বেশ ব্যয়বহুল। কিন্তু ইরানে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা ব্যয় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ ইউরোপের দেশগুলোর ব্যয়ের তুলনায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। কানাডা কিংবা আমেরিকায় বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় যে পরিমাণ ব্যয় হয় তার প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ খরচ হয় ইরানে। এ কারণেই আর্মেনিস্তান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরাক থেকে প্রচুর পরিমাণ বন্ধ্যা দম্পতি ইরানে আসে চিকিৎসার জন্য। অনুবাদক এবং মহিলা নার্সের সুবিধাসহ বিদেশি রোগীদের যত রকমের সেবার প্রয়োজন পড়ে-সব ব্যবস্থাই রয়েছে এই ইবনে সিনা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা কেন্দ্রসহ ইরানের উন্নত প্রায় সকল হাসপাতালে। চিকিৎসা নেয়ার পর রোগীরা ইচ্ছে করলে সশরীরে উপস্থিত না হয়ে টেলিফোন কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমেও পরবর্তী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারে।

ইবনে সিনা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা কেন্দ্রকে বা ইংরেজিতে আবি সিনা ফার্টিলিটি সেন্টারে খুব কম সময়ের মধ্যে বিদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এই সেন্টারটি ২০০৩ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সন্তান, ব্রেস্ট ও মাতৃত্ব সংক্রান্ত সকল রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। বন্ধ্যা দম্পতিদের সামাজিক, মানসিক সর্বপ্রকার সেবা দিয়ে বিদেশি রোগীদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। সুতরাং যারা এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সফল হয়েছেন তাদেরও কিছু মানবিক দায়িত্ব রয়েছে। সে দায়িত্বটি হলো সন্তানের বাবা-মা হবার স্বপ্ন পূরণে এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে অন্যদেরও জানিয়ে সহায়তা করা। বিশেষ করে এখনও যেসব নি:সন্তান দম্পতি সফল হতে পারেন নি তাদেরকে এই চিকিৎসা কেন্দ্র সম্পর্কে জানানো উচিত। তাহলে বিভিন্ন দেশ ও চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে ভুল চিকিৎসা করে হতাশ না হবার আগেই বু আলি সিনা ফার্টিলিটি সেন্টারে এসে যেন সন্তোষজনক চিকিৎসা পেয়ে সন্তানের বাবা-মা হবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব নিরাময়ে ইরান

বাবা-মা হওয়া সকল দম্পতিরই একান্ত কাম্য। সুতরাং ভুল চিকিৎসার কুপ্রভাবে মানসিক রোগেও আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশংকা থেকে যায় বন্ধ্যা রোগীদের।  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য যত রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে প্রায় সকল পদ্ধতিই ইরানে সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বন্ধ্যাত্ব বিদ্যা এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সকল সুবিধাই রয়েছে ইরানে। সম্প্রতি আমেরিকা, ইতালি, সুইডেন, জার্মানিসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে বহু বন্ধ্যা দম্পতি ইরানে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর কারণ হলো ইরানে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থার পাশাপাশি বিদেশি রোগীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সেবা যত্নের আয়োজন করা।

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ