পারস্য থেকে ওমান সাগর পর্যন্ত ইরানের কথাই হবে শেষ কথা: অ্যাডমিরাল খানজাদি
(last modified Tue, 24 Dec 2019 12:36:05 GMT )
ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka
  • রিয়ার অ্যাডমিরাল খানজাদি
    রিয়ার অ্যাডমিরাল খানজাদি

ইরানের নৌবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এ বাহিনীতে ইরানের সাহসী যোদ্ধারা সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া প্রতিরক্ষা যুদ্ধের সময় বড় বড় সাফল্য ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

তারা অনেক কম সুযোগ সুবিধা নিয়েও সাদ্দামের নৌবাহিনীর ওপর বড় ধরনের আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিল। নৌবাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে শত্রুর মোকাবেলায় আরো শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আজকের আলোচনায় আমরা শত্রুর মোকাবেলায় ইরানের নৌবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব। 

ইরানের নৌবাহিনী সাদ্দামের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় এবং বর্তমানেও শত্রুর যেকোনো আগ্রাসন ও হুমকি মোকাবেলায় পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ইরান শুধু পারস্য উপসাগর নয় একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পানি সীমায়ও নিজের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং জলদস্যুদের উৎপাতরোধ, পণ্য, মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচার ঠেকানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া, সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষায় তারা সহযোগিতা করছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী শত্রুর মোকাবেলায় শক্ত প্রতিরোধ এবং বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি নৌবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের এক সমাবেশে বলেছেন, "ইরানের নৌবাহিনী প্রতিরোধের অগ্রভাগে অবস্থান করছে এবং ম্যাকরন সমুদ্র উপকূল, ওমান সাগর এবং আন্তর্জাতিক পানিসীমায় নিজেদের শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে।"

ইরানের নৌবাহিনীর শক্তিশালী অবস্থান থেকে বোঝা যায়, শত্রুর যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় তারা পূর্ণ প্রস্তুত এবং তাদের মনোবল অনেক শক্তিশালী যা যুদ্ধে জেতার জন্য খুবই জরুরি। এই বাহিনী ইরানের সমুদ্র উপকূল ছাড়াও আন্তর্জাতিক পানিসীমায়ও নিজেদের সক্ষমতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতার প্রমাণ দিয়েছে। গত কয়েক বছরে তারা বাব আল মান্দাব প্রণালী, সুয়েজ খাল, ভূমধ্যসাগর এলাকা এবং ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র উপকূল, চীনা বন্দর এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়ও প্রায় ৬০টি নৌবহর পাঠিয়েছে। বিশেষ করে পারস্য উপসাগর অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় ইরানের নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে ইরানের দক্ষ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের ডুবোজাহাজ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন। ডুবোজাহাজগুলো যুদ্ধের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে। ইরানের বিশেষজ্ঞরা নৌবাহিনীর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, সমুদ্র প্রতিরক্ষা শক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যা কিনা প্রয়োজনে যুদ্ধের সময়ও ব্যবহৃত হতে পারে।

ইরানের একটি ডুবো জাহাজ

ইরানের সামরিক বিশেষজ্ঞরা সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে সামরিক শক্তি গড়ে তুলেছে। যেমন সমুদ্রে জাহাজ চলাচল বিষয়ক ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবস্থা, দীর্ঘ সময় ধরে পানির নীচে থাকার উপযোগী ডুবোজাহাজ তৈরি, জাহাজ বিধ্বংসী ডেস্ট্রয়ার নির্মাণ, পানির নীচ দিয়ে হামলা চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইরান স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

ইরান এ পর্যন্ত ফতেহ, গাদির ও বেসাত নামে তিন ধরণের ডুবোজাহাজ নির্মাণ করেছে। এসব ডুবোজাহাজ নিজের সমুদ্র এলাকার  নিরাপত্তা রক্ষা করা ছাড়াও মালাগা, বাব আল মান্দাবের মতো দূরের প্রণালীগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ফতেহ ডুবোজাহাজ পুরোপুরি ইরানের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি। এতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এবং ইলেক্ট্রনিক্স যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। ইরানের হাতে যে জাহাজ বিধ্বংসী 'সেহান্দ' ডেস্ট্রয়ার রয়েছে তা মহাসাগরগুলোতে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। 'সেহান্দ' মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজ বিধ্বংসী ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। যা কিনা শত্রু পক্ষের আতঙ্কের কারণ।  গত বছর ডিসেম্বর এটি ইরানের নৌবাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহি উজমা খামেনেয়ী

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহি উজমা খামেনেয়ী নৌবাহিনীর কমান্ডারদের  এক সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় বিপ্লব বিজয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বিস্ময়কর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, "নৌবাহিনীর বর্তমান প্রজন্মের সৈনিকরা আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান এবং তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপারে নিশ্চিত।" জাহাজ বিধ্বংসী সেহান্দ ডেস্ট্রয়ার, গাদির ও ফতেহ ডুবো জাহাজ এসবই ইরানের নৌবাহিনীর শক্তির কিছু নমুনা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইরানের নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল খানজাদি এ ব্যাপারে বলেছেন, পারস্য উপসাগর থেকে ওমান সাগর পর্যন্ত ইরানের কথাই শেষ কথা। বিশ্বের অন্তত ৩৬টি দেশ তাদের এলাকায় যৌথভাবে সমুদ্র নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু ইরান পারস্য উপসাগর অঞ্চলে এককভাবে নিরাপত্তা বজায় রেখেছে। এখানে কাউকেই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ ইরান দেবে না। এমনকি আন্তর্জাতিক সমুদ্র অঞ্চলেও ইরান তার প্রভাব জোরদারের পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকা তার মিত্রদের সহযোগিতায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান বিরোধী জোট গঠনের চেষ্টা করছে যা কিনা এ অঞ্চলের সমুদ্র নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ইরানকে মোকাবেলার জন্য আমেরিকা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের সমর শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরে বিদেশি হুমকি বেড়ে চলায় সেই হুমকি মোকাবেলার জন্য ইরান নিজের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছে যা কিনা ইরানের স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্যও জরুরি।

অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ  সমুদ্র রুট হিসেবে পরিচিত ভারত মহাসাগরের উত্তরে এবং আটলান্টিক মহাসাগরে নিরাপত্তা রক্ষায় ইরানের নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের উপস্থিতি থেকে নৌ শক্তিতে ইরানের শক্তিমত্তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।

নৌশক্তিতে বলিয়ান ইরানের কর্মকর্তারা মনে  করেন, এ অঞ্চলের সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা গড়ে তোলা জরুরি। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চলতি বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে জোট গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন

ট্যাগ