ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নের মার্কিন ভ্রান্ত দাবি:  রাশিয়ার বিরোধিতা
(last modified Fri, 27 Dec 2019 12:51:48 GMT )
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯ ১৮:৫১ Asia/Dhaka
  • রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ
    রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ

পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবরে ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু গত বছরের মে-তে আমেরিকা এই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন ওই অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছে।

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ গতকাল বলেছেন, ইরানের উপর জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আগামি বছর শেষ হবে এবং আর তা নবায়ন হবে না। রিয়াবকভ জোর দিয়ে বলেন, ইরান ও ছয় জাতিগোষ্ঠির সর্বসম্মতিক্রমে নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সুতরাং ওই প্রস্তাব কার্যকর হওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা' পরিভাষাটির আরো একটি মাত্রা রয়েছে। তা হলো ইরান অস্ত্র রফতানি করতে পারবে না। কিন্তু চুক্তি অনুসারে উভয় বিধিনিষেধের মেয়াদই আগামি বছর শেষ হবে এবং তা আর নবায়ন হবে না।

নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে ইরান পাঁচ বছর অস্ত্র আমদানি বা রফতানি করতে পারবে না। ওই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবরে শেষ হবে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ট্রাম্প প্রশাসন এখন তা নবায়নের জন্য বাহানা খুঁজছে। ইরানের বিরুদ্ধে তারা এখন জনমত গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সমঝোতাকে দুর্বল করার অজুহাত খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে পাঁচ জাতিগোষ্ঠির কেউ এখন পর্যন্ত ইরানের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিবাদ করে নি। এমনকি তারা মার্কিন প্রতিবাদ কিংবা উদ্বেগকেও খুব একটা আমলে নেয় নি।

মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ

রাশিয়া ইরানের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছে। পক্ষান্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সম্প্রতি ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নবায়নের কথা বলে বেড়াচ্ছে।

পম্পেও তার ব্যক্তিগত টুইটে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরিণতির ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে পম্পেও বলেন, এরপর রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো ইরানের কাছে উন্নত অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে এবং ইরান সরকারও যে কারও কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে স্বাধীনভাবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশীয় অঞ্চলে বৃহত্তম অস্ত্র বিক্রেতা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পারস্য উপসাগরের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোর কাছে তারা কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে সেদেশের সরকারের সাথে এগারো হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তিপত্র সই করেছিলেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অস্ত্র বিক্রির সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন নীতি এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্ট করবে।

আমেরিকা এই অঞ্চলটিকে "বারুদের গোলায়" পরিণত করেছে। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান বহু বছর ধরে বড় বড় অস্ত্র কিনতে পারে নি। তবে তার পরিবর্তে ইরান দেশীয় শক্তি সামর্থ ও মেধার ওপর নির্ভর করে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। স্থল,বায়ু  ও নৌ-সেনাদের প্রয়োজনীয় বিচিত্র অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন মান ও পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র,ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম এবং সেন্সর উত্পাদনে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। ওয়াশিংটন সে খবর জানে এবং সে কারণেই ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিতে তারা ভয় পাচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের বিপরীতে তারা ইরানের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বেআইনী দাবি জানাচ্ছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।