মার্কিন অন্যায়ের ব্যাপারে ইউরোপের দুর্বল অবস্থানের সমালোচনা করলেন শামখানি
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ'র দেয়া ঋণ যাতে ইরান কোনোভাবেই পেতে না পারে সে জন্য মার্কিন সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এ ব্যাপারে মার্কিন আচরণের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি বলেছেন, 'তৃতীয় পক্ষের সরকারগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং অন্য যেকোনো দেশের সরকারের বেআইনি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।' তিনি চিকিৎসা খাতে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে বেআইনি, মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের প্রকাশ্য শত্রুতার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, করোনা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী কেনার জন্য আইএমএফ'র দেয়া ঋণ আটকে দেয়ার মার্কিন পদক্ষেপ মানবতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অপরাধ।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা শুধু যে ইরানের সঙ্গেই মানবতা বিরোধী আচরণ করছে তাই নয় একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তারা। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক সমাজ এটা বুঝতে পেরেছে যে, করোনা ভাইরাস ইস্যুতে মার্কিন আচরণ ও কর্মকাণ্ড সারা বিশ্বের জন্য বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী শামখানি এক টুইটার বার্তায় তার দেশের জন্য আইএমএফ'র ঋণ আটকে দেয়ার মার্কিন পদক্ষেপের ব্যাপারে কেবল দুঃখ প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল সম্প্রতি তেহরানের ব্যাপারে মার্কিন আচরণে দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানকে আইএমএফ'র ঋণ প্রদানে আমেরিকা বাধা দিচ্ছে।
এর আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেবল মৌখিক দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং আমেরিকার অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকা ইরানের ঋণ আটকে দিলেও ইউরোপ পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ কোনো দেশের জরুরি প্রয়োজনে ঋণ দেয়া আইএমএফ'র দায়িত্ব এবং একটি দেশের চাপের কাছে নত হয়ে সে দায়িত্ব এ সংস্থাটি এড়িয়ে যেতে পারে না। এভাবে আন্তর্জাতিক সকল রীতিনীতি লঙ্ঘন করে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি গ্রহণ করেছে আমেরিকা।
মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইযাদি ইরানে আইএমএফ'র ঋণ আটকে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকারের প্রচেষ্টাকে দ্বিমুখী আচরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, আমেরিকা সবসময়ই ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাতের চেষ্টা করে আসছে।
আইএমএফ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোকে ৫ হাজার কোটি ডলার জরুরি সাহায্য দিচ্ছে। ইরানও মাত্র ৫০০ কোটি ডলার সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু আমেরিকা তা আটকে দিয়েছে। আইএমএফ'র প্রধান ক্রিস্টালিনা গোরগিউয়া বলেছেন, আন্তর্জাতিক এ সংস্থার নিরপেক্ষ মর্যাদা যদি একবার ক্ষুন্ন হয় তাহলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
এ অবস্থায় ইউরোপ যদি এখনো মার্কিন আচরণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এর পরিণতি তাদেরকেও একসময় ভোগ করতে হবে বলে অনেকে মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৬