ইরানের বিরুদ্ধে স্ন্যাপব্যাক চালু করতে চায় আমেরিকা: সমর্থন দিচ্ছে না কোনো দেশ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানবিরোধী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এখন পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ইরানের বিরুদ্ধে স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালুর চেষ্টা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো।
এ পরিষদের বর্তমান সভাপতি দেশ নাইজার গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালুর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না এবং এ ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক সভাপতি ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিও মার্কিন ওই প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে বলেছিলেন স্ল্যাপব্যাক মেকানিজম ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে কথা বলার কোনো অধিকার আমেরিকা নেই। কেননা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ১৩টি দেশ মার্কিন ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের নতুন সভাপতি দেশ নাইজারের স্পষ্ট বক্তব্য থেকে বোঝা যায় এই পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় সব দেশই মার্কিন বেআইনি দাবির বিরোধী।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ভিয়েনায় পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের বৈঠক শেষে এই বৈঠকের সভাপতি হেলগা স্মিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমেরিকা ২০১৮ সালের ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এ সংক্রান্ত কার্যক্রমে তারা অংশগ্রহণ করেনি। একারণে পরিষদের সদস্য দেশগুলো মনে করে যেহেতু আমেরিকা পরমাণু সমঝোতার অংশ নয় সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নের মার্কিন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐকমত্য রয়েছে। তিনি বলেন আমরা নৈতিক কারণে ইরানের ব্যাপারে আমেরিকার এ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের ব্যাপারে পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকায় এবং স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম চালুর ব্যাপারে মার্কিন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ইউরোপেরও বিরোধিতা করা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ অর্থাৎ চীন ও রাশিয়া শুধু নয় এমনকি ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও মার্কিন দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক হায়েঞ্জ গার্তাঞ্জ বলেছেন, আমেরিকা এখন দাবি করছে তারা পরমাণুর সমঝোতার অংশীদার কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দুই বছর আগেই তারা এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছে এবং এর কার্যক্রমের সঙ্গে তারা যুক্ত নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের নতুন সভাপতি দেশ নাইজারের অবস্থান এবং পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের বিবৃতি ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নে মার্কিন প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা খেল।
এটা স্পষ্ট যে, ওয়াশিংটন নিরাপত্তা পরিষদের নতুন সভাপতির মাধ্যমে তার ইচ্ছামত ইরানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারবে না। অন্যদিকে ইউরোপও নিজের স্বার্থের কথা ভেবে ট্রাম্পকেও সমর্থন করতে পারে না। মোটকথা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা পুরোপুরি একঘরে হয়ে পড়েছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তর্জাতিক সমাজকে সাথে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারেও হতাশ হয়ে পড়েছে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২