নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি রাশিয়া: ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল অসম্ভব
নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা। আবার ট্রাম্প সরকার পরমাণু সমঝোতার সদস্য বলে নিজেকে দাবি করেছে এবং ইরান ওই সমঝোতার মৌলিক লঙ্ঘন করেছে বলেও অভিযোগ তুলেছে।
এইসব দাবি তুলে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময়সীমা দিয়েছে মাত্র এক মাস এবং ২০ সেপ্টেম্বর সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমেরিকার ওইসব পদক্ষেপ বিশ্ব শক্তিগুলো বিশেষ করে রাশিয়ার চরম বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘে রুশ স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেভেনজিয়া গতকাল নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সূচনায় ভাষণ দিয়েছেন। ওই ভাষণে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন: আমেরিকা যতই পীড়াপীড়ি করুক ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ব্যাপারে নতুন করে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা এই পরিষদে নেই। নিষেধাজ্ঞা নবায়নে 'স্ন্যাপব্যাক' নামক কোনো ব্যবস্থাও বিবেচনা করা হবে না বলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
রাশিয়ার এই দৃঢ় অবস্থান ওয়াশিংটনের অবৈধ দাবির ওপর আরেকটি বড় ধরনের আঘাত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল। ট্রাম্প সরকার আসলে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার জন্য যে পীড়াপীড়ি করছে তার উদ্দেশ্য হলো ইরানের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালকে আইন সঙ্গত বলে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্র তৈরি করা। যদিও নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুসারে পাঁচ বছর পর চলতি সনের ১৮ অক্টোবর তারিখে ওই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। সমঝোতার এই অনুচ্ছেদটির বাস্তবায়ন বন্ধে ২০১৯ সাল থেকেই আমেরিকা ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে। প্রথমে তারা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নে নতুন একটি প্রস্তাব পাসের চেষ্টা চালিয়েছে। তারপর স্ন্যাপব্যাক নামের মেকানিজমকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু উভয় প্রচেষ্টাই নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার সকল দাবি ও অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং একপেশে।
এখন তো রাশিয়া চলতি অক্টোবর মাস থেকে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি। সুতরাং ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার মার্কিন আশা আর পূরণ হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিশ্লেষক মহলের ধারণা আসছে নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার জন্য ট্রাম্পের বিদেশ নীতির অন্তত একটা সাফল্য দেখানো খুব জরুরি। সে কারণেই ট্রাম্প সরকার ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু রাশিয়াসহ চীন এমনকি আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্ররাও প্রচণ্ডরকম বিরোধিতা করায় ওই প্রচেষ্টা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং মার্কিন প্রত্যাশা পূরণের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও দেখছেন না বিশ্লেষকমহল। নিরুপায় হয়ে আমেরিকা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়ে বলেছে: ইরানের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা যেসব দেশ মানবে না তাদের সঙ্গে আমেরিকার অর্থনৈতিক কিংবা বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকবে না। যদিও মার্কিন ওই হুমকিকে কেউই আমলে নিচ্ছে না।#
পার্সটুডে/এনএম/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।