মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান খাদ্য ও জরুরি ওষুধপত্র কিনতে পারছে না
ইরানের ব্যাপারে জাতিসংঘের 'বীরত্ব' এবং ইসরাইলি-মার্কিন জুলুমের বেলায় মেরুদণ্ডহীনতার রহস্য!
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, ইরান জাতিসংঘে তার সদস্যপদের চাঁদা পরিশোধ না করায় জাতিসংঘ-ইশতেহারের ১৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী ইরানকে এই সংস্থার সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে অংশ নেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল।
ওই অধিকার ফিরে পেতে হলে তেহরানকে ওই চাঁদা তথা এক কোটি ৬২ লাখ ৫১ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে বলে গুতেরেস জানিয়েছেন।
মার্কিন অথনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান জাতিসংঘের কাছে ওই চাঁদা পাঠাতে পারছে না। তাই এ বিষয়ে জাতিসংঘের গৃহীত পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার দেশের ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এই বিশ্ব সংস্থা অথচ আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান খাদ্য ও জরুরি ওষুধপত্র কিনতে পারছে না- সে বিষয়টি উপেক্ষা করে চলেছে জাতিসংঘ।
তিনি আবারও মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অর্থনৈতিক সন্ত্রাস বলে অভিহিত করেছেন। জারিফ বলেছেন, সাগরে প্রকাশ্য দস্যুবৃত্তি করে ইরানের প্রায় বিশ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে যে ১১০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে আমেরিকা জাতিসংঘ সেই অর্থ থেকে ইরানের বকেয়া চাঁদা সংগ্রহ করতে পারে!
একতরফা মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান যেমন তার তেলের আয় ও বৈদেশিক রপ্তানির আয় সংগ্রহ করতে পারছে না তেমনি ইরান তার কেনা বিদেশী পণ্যের মূল্যও পরিশোধ করতে পারছে না।
জাতিসংঘ মহাসচিবের পদক্ষেপ থেকে এটা স্পষ্ট, ইরান কেনো জাতিসংঘের চাঁদা পরিশোধ করতে পারছে না এবং মার্কিন অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে ইরানি জনগণ যে নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে সেসব বিষয়ে নির্লজ্জভাবে উদাসীন রয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের বৈষম্যমূলক কাঠামোর কারণে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী দেশগুলো ও প্রভাবশালী অন্য অনেক দেশ এই বিশ্ব-সংস্থার নানা সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলছে। যেমন, সৌদি সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তার কারণে জাতিসংঘ ২০১৬ সালে শিশু-ঘাতক সরকারগুলোর তালিকা থেকে রিয়াদের নাম বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে যদিও সৌদি সরকার ইয়েমেনি শিশুদের হত্যা করাসহ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে!
মার্কিন সরকার জাতিসংঘের মোট চাঁদার ২২ শতাংশ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি যা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।
ইরান সময়মত জাতিসংঘের বার্ষিক চাঁদা শোধ করতে পারেনি বলে তার ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এই সংঘ অথচ মার্কিন সরকার ও দখলদার ইসরাইলের নানা অপরাধযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে এই বিশ্ব-সংস্থা! তেলআবিব আর ওয়াশিংটন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনেক প্রস্তাবও লঙ্ঘন করে যাচ্ছে বিনা-বাধায়! এইসব বিষয়ে কি কোনো আইনের আশ্রয় নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিসংঘের নির্যাতিত সদস্য দেশগুলোর প্রতি সহায়তার পদক্ষেপ নিতে পারেন না? #
পার্সটুডে/এমএএইচ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।