এপ্রিল ২৫, ২০২২ ১৮:৪৯ Asia/Dhaka
  • শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় রেডিও তেহরান

উদর পূর্তি আর নিদ্রার জন্যই আমাদের জন্ম হয় নাই। নিজকে জানার জন্য, নিজকে চিনার জন্য এবং নিজকে বিকশিত করার লক্ষ্যেই এই বৈচিত্রময় পৃথিবীর সব কিছুই আমাদের কম বেশি জানা উচিত। তাই বিশ্বকে জানার জন্য এবং নিজকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শোনা শুরু করি। 

আজ থেকে ৪০ বছর আগের কথা! তখন আমি একজন কলেজের ছাত্র ছিলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি বর্হিবিশ্বের রেডিও শোনা, পত্র-পত্রিকা, ডাক টিকিট সংগ্রহ, পত্রমিতালী এবং গল্পের বই পড়া এগুলোয় ছিল আমার প্রিয় সখ। 

১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক দিন ক্লাস না থাকায় কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ছিলাম। হঠাৎ ডাক পিয়ন এসে আমার হাতে বেশ কিছু চিঠিপত্র ও পত্রিকা দিয়ে দ্রুত চলে গেলেন। উল্লেখ্য যে, আমি ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত বিভিন্ন বেতারের অনুষ্ঠান শুনতাম এবং চিঠি লিখতাম। সে জন্যই আমি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র থেকে, পেনফ্রেন্ডদের কাছ থেকে এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রচুর চিঠি ও পত্র-পত্রিকা পেতাম। তো ডাক পিয়ন চলে যাওয়ার পর আমি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগ, ঢাকা ধানমন্ডি থেকে প্রকাশিত "নিউজ লেটার" নামক মাসিক পত্রিকাটি নিয়মিত পেতাম।

নিউজ লেটার পত্রিকাটি পড়তে পড়তে মাঝের পাতায় একটি ঘোষণা দেখতে পেয়েছিলাম যে, "তেহরান বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনুন" ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বেতার ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ তেহরান বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে সম্প্রতি বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের জন্য ৪৫ মিনিট ব্যাপী বাংলা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে যাচ্ছে। আগামী ১৭ই এপ্রিল ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন সন্ধ্যা ০৬:৩০ মিনিট থেকে ০৭:১৫ মিনিট পর্যন্ত শর্টওয়েভ ১৯ ব্যান্ডে অর্থাৎ ১৫০৮৪ কিলোহার্টজে। উপরোক্ত ঘোষণাটি পড়ে আমি দারুণভাবে এক্সসাইটেড হয়ে ছিলাম! রেডিও তেঽরানের বাংলা অনুষ্ঠান শোনার ঘোষণাটি এক টুকরো কাগজে লিখে আমার পড়ার টেবিলের সামনে রেখে ছিলাম, যাতে আমি নির্দিষ্ট দিন, তারিখ ও সময়ে অনুষ্ঠান শুনতে পারি। তখন থেকেই আমি সময় গণনা শুরু করি। অবশেষে একদিন পেয়ে গেলাম ১৯৮২ সালের ১৭ই এপ্রিল সন্ধ্যা ০৬:৩০ মিনিটে সেই মাহেন্দ্র ক্ষণ!

শর্টওয়েভ ১৯ মিটার ব্যান্ড কাঙ্ক্ষিত বেতারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শোনার জন্য আমি রেডিও'র নব ঘুুরাতে ঘুুরাতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে ছিলাম কিন্তু কিছুতেই রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান ধরতে পারছিলাম না! হাল ছেড়েই দিয়ে ছিলাম, রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান মনে হয় আজ আর শুনতে পারবো না! কিছুক্ষন পর আবার রেডিও'র নব ঘুুরাতেই ক্ষিণস্বরে বাংলা ভাষায় কথা শুনতে পেলাম। সাথে সাথে ফাইন টিউনিং এ্যাডজাস্ট করে কান পেতে মনোযোগ সহকারে থাকলাম, কয়েক মিনিট অনুষ্ঠান শোনার পর বুঝতে পারলাম এটিই আমার কাংখিত বেতার "রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠান"।

১৯৮২ সালের ১৭ এপ্রিলের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান আমি মাত্র ১৫ মিনিট মত শুনতে পেরেছিলাম। তাও আবার সেটা উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠান!!! কি যে আনন্দ! কি যে শিহরণ লেগে ছিল! সেটা আমার ক্ষুদ্র ভাষায় প্রকাশ করা মোটেও সম্ভব নয়। সেই ৪০ বছর আগের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটির কথা আজও আমার হুদয়ের খাতায় লিখা আছে। প্রথম  শ্রবণকৃত অনুষ্ঠানটির নাম ছিল "কোরআনি শিক্ষার নুরানি ঝলক ও ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা"। রেডিও তেহরানের আশির দশকের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান গুলো আজও আমার হুদয়ে নাড়া দেয়। যেমন- পল্লবিত কিশলয়, পরশ পাথর, সবুজপাতা, কষ্টিপাথর, জাগরণ ও সমীরণ। 

হাটি হাটি পা পা করে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ ৪০ বছরে এসে পৌঁছেছে। সুদীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান সকল কলাকুশলীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রেডিও তেহরান তার বলিষ্ঠ কণ্ঠে বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সংবাদ, শিক্ষণীয়, মনোমুগ্ধকর, তথ্য ও তত্ত্বে ভরা অনুষ্ঠানসমুহের মাধ্যমে শ্রোতাদের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলা বিভাগের অগ্রযাত্রা আরও সুন্দর হোক! দীর্ঘায়িত হোক এবং কণ্টকমুক্ত হোক! আমি চার দশক ধরে রেডিও তেহরানের সাথে আছি এবং থাকব। সেই সাথে আগামী ২০৩২ সালে বাংলা বিভাগের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব সবায় মিলে উদযাপন করতে পারি এই শুভ কামনায় করি।

 

সিনিয়র শ্রোতা:

মোঃ মোখলেছুর রহমান, 

প্রতিষ্ঠাতা মহা পরিচালক, 

বাংলাদেশ ডিএক্স ক্লাব  ইন্টারন্যাশনাল, 

পোঃ বহলবাড়িয়া-৭০৩০, জেলা : কুষ্টিয়া। 

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫

ট্যাগ