“বিস্ময়কর ইরানকে প্রতি পর্বে নতুনভাবে খুঁজে পাই ‘ইরান ভ্রমণ’ অনুষ্ঠানে”
(last modified Fri, 01 Jul 2022 04:39:16 GMT )
জুলাই ০১, ২০২২ ১০:৩৯ Asia/Dhaka
  • “বিস্ময়কর ইরানকে প্রতি পর্বে নতুনভাবে খুঁজে পাই ‘ইরান ভ্রমণ’ অনুষ্ঠানে”

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সকলে ভালো ও সুস্থ আছেন। রেডিও তেহরান আমাদের জন্যে নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের সমাহার নিয়ে হাজির হয় প্রতি সপ্তাহে। এসকল অনুষ্ঠানের মধ্যে খুবই আকর্ষণীয় ও তথ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো ‘ইরান ভ্রমণ’।

বিশাল আয়তনের দেশ ইরান। ইতিহাস-ঐতিহ্য, পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বিচিত্র উপাদানে সমৃদ্ধ দেশ ইরান। এই ইরানের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দর্শনীয় অনেক নিদর্শন। এইসব নিদর্শনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রতি সপ্তাহে হাজির হয় আমাদের প্রিয় উপস্থাপকগণ। আর আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, ইরানের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের নানা স্থানের সাথে।

'ইরান ভ্রমণ' এমন একটি অনবদ্য অনুষ্ঠান, যার মাধ্যমে ইসলামী ইরানের নানা স্থানকে আমরা ভ্রমণের সাথে সাথে আত্মিকভাবে উপলব্ধিও করতে পারি। উপস্থাপকদের সুন্দর বর্ণনা এবং উপস্থাপনার সুবাদে আমরা যেন ঘুরে বেড়াই ইরানের এখানে-সেখানে।

গত ২৮শে মে ২০২২ ‘ইরান ভ্রমণ’ অনুষ্ঠানের ১১২তম পর্বে শুনলাম ঐতিহাসিক নিদর্শন: গোরগান জামে মসজিদ ও এই অঞ্চল সম্পর্কে মূল্যবান আলোচনা।

গোরগান জামে মসজিদ

গোরগান অঞ্চলে রয়েছে মূল্যবান ও সমৃদ্ধ বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছয় হাজার বছর আগের মৃৎশিল্পের যেসব নিদর্শন এখানকার তুরাঙ্গ টিলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেছে, সেগুলো প্রমাণ করে এই এলাকার মানব বসতি তথা সভ্যতার ইতিহাস কতো প্রাচীন। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে গোরগান একটি স্বাধীন ভূমি ছিল এবং রোম সম্রাটের দরবারে তাদের রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধি ছিল। আলে যিয়ারের সময়ে এটি ছিল প্রশাসনকার্য পরিচালনার কেন্দ্রীয় শহর। কিন্তু তৈমুরীয় এবং মোগলদের হামলার ফলে গোরগানের এই প্রাচীন শহরটি নাস্তানাবুদ হয়ে যায়। এ সময় গোরগান শহরের জনগণ আস্তারাবাদ নামের ছোট্ট একটি পার্বত্য শহরে চলে যায়। পার্বত্য উপত্যকার জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে এই শহরটি অবস্থিত। আস্তারাবাদের আবহাওয়া ছিল অনুকূল। তাছাড়া এখানকার ভূমিও বেশ উর্বর অর্থাৎ কৃষিকাজের উপযোগী। ব্যবসায়ীরা তখন এদিক দিয়েই যাওয়া-আসা করতো। এইসব কারণে শহরটির উন্নয়ন ঘটে এবং ধীরে ধীরে এটি বিশাল একটি শহরে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে এই আস্তারাবাদই গোরগান নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। 

সাফাভিদের শাসনামলে গোরগান শহরকে ‘দারুল মোমেনীন’ বলা হতো। এই সময় গোরগান ছিল জ্ঞানী-গুণী আলেম-ওলামাদের বাসস্থান ও সমাগমস্থল। অতীতে গোরগানের পাঁচটি প্রবেশদ্বার ছিল। শহরের দূর-দূরান্ত থেকে এখানকার টাওয়ার এবং কেল্লার উঁচু প্রাচীর দেখা যেত। গোরগানের উত্তরে, পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে এস্কান্দারী প্রাচীর নামে খ্যাত প্রশস্ত একটি প্রাচীর ছিল। এই প্রাচীরটি সাসানীয় শাসনামলে নগর প্রতিরক্ষার লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে। প্রাচীরটির স্মৃতিচিহ্ন এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, এইসব ধ্বংসাবশেষ টাওয়ার এবং কেল্লারই নিদর্শন।

গোরগান জামে মসজিদও এখানকার আরেকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই মসজিদটির মূল ভিত্তি সালজুকি শাসনামলে নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো এই মসজিদটির ইটের তৈরি মিনার এবং মিম্বারের উপরে কুফি অক্ষরে লেখা শিলালিপীর অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। কাঠের তৈরি মিম্বারের উপরে ১০১৮ হিজরী লেখা আছে। মিউজিয়াম বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী- বিশ্বের ব্যতিক্রমধর্মী চারটি মিম্বারের মধ্যে গোরগান জামে মসজিদের মিম্বারটি একটি। গোরগানের মিউজিয়ামটিও এখানকার আরেকটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই মিউজিয়ামটি প্রধান তিনটি বিভাগে বিভক্ত। পুরাতত্ত্ব বিভাগ, নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগ এবং শিলালিপী বিভাগ। প্রাচীন নিদর্শনবহুল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিউজিয়ামগুলোর মধ্যে এটি চতুর্থ স্থানীয়। এখানে মজুদ প্রাচীন নিদর্শনগুলো পাঁচ হাজার বছর আগেকার।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এসকল বিষয় এসকল আলোচনায় উঠে আসে। আমরা এসব আলোচনা থেকে মূল্যবান সব তথ্য, ইতিহাস যেমন জানতে পারি তেমনি জানতে পারি ঐতিহাসিক সব নিদর্শন সম্পর্কে। রেডিও তেহরান যথার্থই যেন আমাদের গাইড-এর ভূমিকা পালন করে।

ইরান ভ্রমণের বিভিন্ন পর্বে ইরানের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আমাদের জন্যে তুলে ধরে ধারাবাহিকভাবে। আমরা ইরান ভ্রমণের এসকল পর্ব শুনে অবগাহন করি আজকের ইরান এর বিভিন্ন প্রান্তে। বিস্বয়কর ইরানকে প্রতি পর্বে নতুন নতুন ভাবে খুঁজে পাই আর জানার আবহে ঢুবে যায় প্রতি মুহূর্তে।

এ ধরনের সুন্দর ও তথ্যবহুল অনুষ্ঠান শ্রোতাদের উপহার দেবার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনেক অনেক শুভেচ্ছাসহ-

 

এস এম নাজিম উদ্দিন,

বারুইপাড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ