'ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস' অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত
(last modified Fri, 04 Nov 2022 14:22:50 GMT )
নভেম্বর ০৪, ২০২২ ২০:২২ Asia/Dhaka
  • 'ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস' অনুষ্ঠান সম্পর্কে মতামত

প্রিয় মহোদয়,  আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগ থেকে আজকের (২৯/১০/২০২২, শনিবার) প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো হল বিশ্বসংবাদ, দৃষ্টিপাত, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান, কথাবার্তা ও ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস। প্রচারিত প্রতিটি অনুষ্ঠানই আমাদের খুব ভালো লেগেছে।

তবে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানিদের অবদান ও ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাস ছিল অসাধারণ। উক্ত দুটি অনুষ্ঠানই আমাদের ইরানকে বুঝতে, ইরানের মনোবল, শক্তি ও ঐক্য বুঝতে দারুণভাবে সহায়তা করে থাকে।

আজ (২৯/১০/২০২২, শনিবার) ইরান-ইরাক যুদ্ধের ইতিহাসের উপস্থাপনায় ছিলেন আকতার জাহান ও নাসির মাহমুদ। তাঁদের চমৎকার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য যে, গত আসরে ইরানি যোদ্ধাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজও ইরানি যোদ্ধাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইরানি শহীদ কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়।

১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেনী (রহ.) এর নেতৃ্ত্বে ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর ইরানি জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী হয়। এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার প্রসার ঘটে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানি সেনাদের মূল্যবোধ শুধু বিপ্লবের কারণেই হয়নি, বরং তা আগে থেকেই ছিল।

ইরানি কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় আগ্রাসী ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন। তিনি ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ৬ বছর বয়স থেকে অধ্যায়ন শুরু করেন। পড়াশোনা ছিল তাঁর অদম্য নেশা। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ইসলামি আন্দোলন শুরু করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই একজন সেরা বক্তায় পরিণত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স পড়া শুরু করেন। ইতিহাসের পাশাপাশি তিনি ইসলাম বিষয়ে বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করেন।

এমতাবস্থায় ইমাম খোমেনী (রহ.) এর নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লব শুরু হলে তিনি সে আন্দোলনে যোগ দেন। ইরানের জনগণকে স্বৈরশাসক শাহ’র বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি সারা ইরান চষে বেড়ান। মা্ত্র ১৪ বছর বয়সে শাহ সরকার তাঁকে কারাগারে নেয়।

সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদার বয়স যখন ২১ বছর তখন ইরানি বিপ্লব সফল হয়। এই ৭ বছরে তাঁকে অনেকবার কারাগারে নেয়া হয় এবং সেখানে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচার চালানো হয়।

ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর ইরানের শাহ-সমর্থকরা নানা জায়গায় বিদ্রোহ করে এবং সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা সেসব বিদ্রোহ দমনে গুরু্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ইসলামি বিপ্লবের পর ইমাম খোমেনী (রহ.) এর নির্দেশে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি গঠিত হয়। এসময় সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা আইআরজিসি গঠনে গুরু্ত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

১৯৮০ সালে আগ্রাসী ইরাকি বাহিনী ইরানে আক্রমণ শুরু করলে কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ‍তুলেন। যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন শহর থেকে সৈন্যবাহিনীতে লোক ভর্তি করে তাদেরকে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ময়দানে প্রেরণ করার গুরুদায়িত্বও পালন করেন।

ইরাকি বাহিনী ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় খুররামশাহ শহর দখল করে নেয়ার পর কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদার নেতৃত্বে একটি দল ইরাকি বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ইরাকি বাহিনীকে শহর থেকে বিতারিত করা ছিল ঐ আক্রমণের উদ্দেশ্য। কিন্তু তিনি ও তাঁর বাহিনী শত্রু সেনাদের দ্বারা আক্রান্ত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারপরও ইরানি যোদ্ধারা ইরাকের অন্ততঃ ২০টি ট্যাংক ধ্বংস করেন।  

যুদ্ধ করতে করতে কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদা ও তাঁর ১৪০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। এর ১৮ মাস পর ১৯৮১ সালের ৮ মে ইরানি সেনাবাহিনী খুররামশাহ শহর পুনর্দখল করেন এবং কমান্ডার সাইয়েদ হোসেইন আলামুল হুদাসহ ১৪০ জনের মৃতদেহ খুঁজে বের করে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শাহাদাতের স্থানেই দাফন করেন।  

এমন চমৎকার তথ্যবহুল, শিক্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক একটি অনুষ্ঠান উপহার দেয়ায় রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

 

ধন্যবাদান্তে,  
মোঃ শাহাদত হোসেন

সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ-২৩০০, বাংলাদেশ।   

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।