শ্রোতাদের মতামত
'মরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) ছিলেন বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষের গর্ব'
১৯৮৯ ইমাম খোমেনী (রহ.) এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও সারা বিশ্বে হাজার হাজার খোমেনীর জন্ম হয়েছে, তারা ইমাম খোমেনীর চিন্তা-চেতনাকে লালন করছে এবং ইমামের নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে পথ চলা অব্যাহত রেখেছেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ইমাম খোমেনী (রহ.)-র চিন্তা ও আদর্শ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গোটা বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষগুলো সত্যের পথে চলার ক্ষেত্রে নতুন করে সাহস পেয়েছে।
বিশ্বের আধিপত্যকামীদের বুকে কাঁপন সৃষ্টিকারী অবিসংবাদিত নেতা ইমাম খোমেনী (রহ.)'র মৃত্যুর খবরে, সেদিন অনেকেই এটা ভেবেছিল যে, ইমাম খোমেনী (রহ.)'র ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তার চিন্তা-চেতনা ও আদর্শেরও মৃত্যু ঘটবে এবং বিশ্বব্যাপী অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধের ধারা সূচিত হয়েছে, তা স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ইমামের মৃত্যুর তিন দশকের পরেও তাঁর চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের প্রভাব কমেনি বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইমাম খোমেনীর চিন্তা ও আদর্শ ইরানসহ গোটা বিশ্বকেই প্রভাবিত করেছে।
ইমাম খোমেনী (রহ.) ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকেই ঐতিহাসিক ও মহা সংগ্রামের ময়দানে প্রবেশ করেন এবং সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত রীতি-নীতি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। তিনি ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলেন এবং সবাইকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ইমাম খোমেনীর চিন্তা-চেতনা ও দর্শন, সমাজের বিশেষ কোন শ্রেণী বা গোষ্ঠী কেন্দ্রীক ছিল না; তিনি গোটা বিশ্বকে নিয়ে চিন্তা করতেন। তিনি গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য সঠিক পথ তুলে ধরেছেন।
ইমাম খোমেনী (রহ.) ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে মানুষকে গড়ে তোলার ও সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। তিনি নিজে ইসলামী সমাজ (ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান) প্রতিষ্ঠা করে সবার সামনে বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) তাঁর ওসিয়তনামায় যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তা মেনে চললে মানুষ তার প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন এবং স্বনির্ভর হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে তার সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যখন ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত হয় তখনই এর সাথে ইসলামের বিরোধিতার প্রসঙ্গ আসে।
নিজের ভবিষ্যত নির্ধারণে যে, খোদ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা ইমাম খোমেনী (রহ.) মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। ইমাম খোমেনীর মতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। এ কারণে তিনি দেশের মানুষকে সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং সরকারের কাজ তদারকির আহ্বান জানাতেন। তিনি যোগ্য ও নীতিবানদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করার উপর সর্বদা গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন শক্তির উপাসনা করা থেকে সরে আসাকেই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন বলে মনে করতেন।
ইমাম খোমেনী (রহ.)'র চিন্তাধারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ইস্পাত কঠিন দূর্গ গড়ে উঠেছে। যখনই মানুষের অধিকারের প্রসংঙ্গ এসেছে তখনি ইমাম খোমেনী গোটা বিশ্বের মানুষের অধিকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) সবার সামনে এটা তুলে ধরেছেন যে, বিভিন্ন জাতি যদি মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষা করে চলে এবং অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের জুলুম-অত্যাচার আর অব্যাহত রাখতে পারবে না। তিনি মনে করতেন, বিশ্বের জাতিগুলো যদি বিজাতীয়দের কাছে আত্মসমর্পনের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে আসতে পারে, তাহলে তারা ভবিষ্যতে সম্মান ও মর্যাদার স্বাদ আস্বাদন করতে সক্ষম হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.)'র চিন্তা ও দর্শন স্থান ও কালের গন্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনচেতা মানুষদের এখনও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বর্তমান যুগের মানুষকে ভ্রান্ত পথ ছেড়ে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আহমাদ হুবার বলেছেন, বর্তমান যুগের মানুষ যে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে সে ব্যাপারে ইমাম খোমেনী (রহ.) সবাইকে বিপদ সংকেত দিয়েছেন।
মরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) কেবল একজন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই ছিলেন না একই সাথে তিনি রাজনৈতিক দিক দিয়েও ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি সাম্রাজ্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ইসলামী বিপ্লব সফল করেছেন এবং ইসলামী ইরানকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করেছেন। শত্রুদের ধারণার বিপরীতে ইমাম খোমেনীর আদর্শ ও চিন্তাধারা ক্রমেই বিস্তার ঘটছে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ক্রমেই কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ইমাম খোমেনী (রহ.)'র দিকনির্দেশনাগুলো মজলুম মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক:
এস এম নাজিম উদ্দিন
মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৫