ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান চিন্তাবিদ শহীদ মোতাহ্হারি এবং ইমাম খোমেনির 'প্রিয় সন্তান'
মোর্তেজামোতাহ্হারি, শিক্ষক মোতাহারি এবং শহীদ মোতাহ্হারি নামে পরিচিত একজন চিন্তাবিদ, গবেষক, পণ্ডিত, লেখক, লেকচারার এবং ১৪ শতকের বিখ্যাত ইরানি ইসলামি পণ্ডিতদের একজন ছিলেন।
তিনি ইরানের ইসলামের বিপ্লবের মহান রূপকার হযরত ইমাম খোমেনী (রহ) এবং বিখ্যাত মোফাস্সের কোরান আল্লামেহ তাবাতাবায়ীর ছাত্র ছিলেন।একজন গভীর চিন্তাবিদ এবং একজন সুনির্দিষ্ট গবেষক এবং দর্শনের মতো কিছু ক্ষেত্র ছাড়াও আইনশাস্ত্রে তার পান্ডিত্য সর্বজন স্বীকৃত। শহীদমোতাহ্হারি ছিলেন ইসলামী দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব এবং কুরআনের ব্যাখ্যার অন্যতম অধ্যাপক এবং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি অনেক রচনা লিখেছেন।
তিনি ছিলেন ইসলামী বিপ্লবের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন এবং ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বুদ্ধিজীবী নেতা হিসেবে তাকে দেখা হয়। শহীদ মুতাহহারী মার্কসবাদী মতাদর্শের মোকাবিলা করতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলেমদের সাথে আলোচনা ও বিতর্ক করতেন। তিনি হুসাইনিয়া ইরশাদ তৈরি করেছিলেন যেখানে তিনি আলেমদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে বাহাসে লিপ্ত হতেন। ইরানে শহীদ মুতাহারির শাহাদাত দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম:
শহীদ মুতাহারী ১৯৫৪ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি সেখান ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসলাম বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। শহীদ মোতাহারী তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, ডক্টরেট, সাধারণ ইসলামিক বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, রহস্যবাদ, আইনশাস্ত্র, দর্শন ও রহস্যবাদের মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি অনেক বিষয়ে পড়াতেন।
ইসলামের প্রতি এক নজর:
শহীদমোতাহ্হারি বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা এখনও সঠিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। মানুষের মধ্যে এর বাস্তবতা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে, যার প্রধান কারণ ইসলামের নামে কিছু লোকের দেওয়া ভুল শিক্ষা। তার মতে এই ধর্মকে যারা সমর্থন করার দাবি করে তাদের কাছ থেকে বেশি আঘাত এসেছে।
"বস্তুবাদের প্রবণতার কারণ" শীর্ষক বই
"বস্তুবাদের প্রবণতার কারণ" শীর্ষক বই যেটি ১৯৬৯-১৯৭০ সালে উচ্চ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রফেসর মোতাহ্হারি বক্তৃতার সম্পূর্ণ সংস্করণ ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। মোতাহ্হারির হাতে লেখা দক্ষ রচনাটি এমন সময়ে রচিত হয়েছিল যখন ইরানে মার্কসবাদের মত বস্তুবাদী স্কুলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল। আয়াতুল্লাহ মোতাহ্হারি এই বইটিতে চার্চের ভূমিকা, দার্শনিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক, … ধারণা, বস্তুবাদের প্রবণতা পর্যালোচনা করেছেন এবং এই ক্ষেত্রে ত্রুটি ও বিচ্যুতির কারণগুলো স্পষ্ট করেছেন।
ইমাম খোমেনীর নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টা
আয়াতুল্লাহ মোতাহারী ইসলামী বিপ্লবের বিজয় এবং পাহলভি শাসনের পতনের পর ইসলামী শাসনকে স্থিতিশীল করার জন্য অনেক তৎপর ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ছিলেন ইমাম খোমেনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টা।
হত্যা ও শাহাদাত
১৯৭৯ সালের ১ মে রাতে দেশের চলমান সমস্যা নিয়ে একটি অধিবেশন শেষ করার পর যাওয়ার পথে একটি গলিতে একজন লোক তাকে নাম ধরে ডাকেন। আয়াতুল্লাহ মোতাহারী তার দিকে ফিরলেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই লোকটি "ফোরকান" নামক বিপজ্জনক দলের সদস্য ছিল এবং তার নাম ছিল মোহাম্মদ আলী বাসিরি। এই দলটি ধর্ম ও সমাজের ব্যাপারে চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিল। গুলি চালানোর পর মুর্তেজা মোতাহারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু চিকিৎসকরা তার জীবন রক্ষা করতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
শহীদ মোতাহারির ব্যাপারে ইমাম খামেনির দৃষ্টিভঙ্গি
" সমাজে বিভিন্ন স্তরের আদর্শিক চাহিদা পূরণ এবং নতুন বিষয় উত্থাপনের জন্য এই শহীদের প্রচেষ্টা যদি না থাকত তাহলে এখন ইসলামী সমাজ অন্যরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়ত।"
শহীদ মোতাহারীর কিছু বিখ্যাত বাণী
জিহাদ
"কোরআন বলে যে শত্রুর হৃদয়ে ভয় জাগানোর জন্য যাতে সে আপনাকে আক্রমণ করার কথা চিন্তাও না করে, শক্তিশালী বাহিনী পাঠাও এবং শক্তিশালী হও।" (জিহাদ/পৃঃ ২৮)
ইসলামে কর্ম
"ইসলাম বেকারত্ব ও অলসতার শত্রু। মানুষ সমাজ থেকে উপকৃত হয় এমন কাজ প্রত্যাশা করে। ফলে কাজই ব্যক্তি ও সমাজ গঠনের সর্বোত্তম উপাদান এবং বেকারত্ব হচ্ছেড় দুর্নীতির সবচেয়ে বড় কারণ। তাই সমাজকে প্রয়োজনীয় কাজের যোগান দিতে হবে। " (প্রত্যাদেশ ও নবুওয়াত/পৃ ১১৮)
অর্থনীতির অবস্থা
"ইসলামের বাস্তববাদী স্কুল অর্থনীতিকে একটি অবকাঠামো হিসাবে বিবেচনা করে না, তবে এর মৌলিক ভূমিকাকেও উপেক্ষা করে না।" (দশটি বক্তৃতা/ পৃ. ৩০৯)
প্রাচ্যের জীবন
"পশ্চিমের জন্য অন্যান্য যুগের মতো, বিজ্ঞান ও শিল্পে যত অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সত্ত্বেও প্রাচ্য থেকে জীবনের দর্শন শেখার সময় এসেছে।" (যৌন নীতিশাস্ত্র/পৃষ্ঠা 28)
একেশ্বরবাদী বিশ্বদৃষ্টি
"একেশ্বরবাদী বিশ্বদৃষ্টিতে আকর্ষণ রয়েছে এবং এটি একটি চুম্বক। এটি তীক্ষ্ণতা এবং সাহস দেয়। এটি উচ্চ পবিত্র লক্ষ্য এবং নিঃস্বার্থ ব্যক্তিদের সমাজে উপস্থাপন করে।" (কাজের সেট, v2/p ৮৪)
ইসলামের নবী (সা) ও পরামর্শ
"আল্লাহর রসূল, যদিও তিনি একজন নবী ছিলেন এবং লোকেরা তার কাছে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে জানার আশা করেনি তবুও তাদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন।" (বুদ্ধিমান শব্দ এবং উপদেশ/পৃ ১২০)
ইসলামের নবী এবং ফিলিস্তিন ইস্যু
"ইসলামের নবী যদি জীবিত ছিলেন, তিনি কি করতেন? আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে মহান নবী আজ ইহুদীদের আচরণে তিনি তাঁর পবিত্র কবরে কাঁপছেন। আল্লাহর কসম, আমরা গাফিল। আল্লাহর কসম যে বিষয়টি আজ মহানবী (সা)কে গভীরভাবে ব্যথিত করতেন তা হচ্ছে ফিলিস্তিনের ইস্যু... আল্লাহর কসম, আল্লাহর কসম, আমরা এই সমস্যার জন্য দায়ী।" (ফিলিস্তিন সম্পর্কে বক্তৃতা)#
পার্সটুডে/এমবিএ/৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।