দেখবো ঘুরে ইরান এবার: গিলান,রাশত
https://parstoday.ir/bn/news/uncategorised-i38668-দেখবো_ঘুরে_ইরান_এবার_গিলান_রাশত
গিলান হচ্ছে বৃষ্টি বাদলের প্রদেশ, গাছগাছালি আর বন জঙ্গলময় প্রদেশ, ধান আর রেশমের প্রদেশ, বহতা নদী আর বাসন্তী রঙের বুনোফুল, নীল শাপলা ফুল, হাঁস এবং হাস জাতীয় পাখিদের প্রদেশ। বর্ণনা থেকেই বোঝা যায় যে বেশ বিচিত্র এই প্রদেশটি। প্রকৃতির এই অনিন্দ্যসুন্দর লীলাবৈচিত্রের বাইরেও এখানে রয়েছে শহরকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের অনেক নিদর্শন।
(last modified 2025-09-29T12:37:45+00:00 )
মে ২৫, ২০১৭ ১৯:০০ Asia/Dhaka
  • দেখবো ঘুরে ইরান এবার: গিলান,রাশত

গিলান হচ্ছে বৃষ্টি বাদলের প্রদেশ, গাছগাছালি আর বন জঙ্গলময় প্রদেশ, ধান আর রেশমের প্রদেশ, বহতা নদী আর বাসন্তী রঙের বুনোফুল, নীল শাপলা ফুল, হাঁস এবং হাস জাতীয় পাখিদের প্রদেশ। বর্ণনা থেকেই বোঝা যায় যে বেশ বিচিত্র এই প্রদেশটি। প্রকৃতির এই অনিন্দ্যসুন্দর লীলাবৈচিত্রের বাইরেও এখানে রয়েছে শহরকেন্দ্রিক সৌন্দর্যের অনেক নিদর্শন।

 গিলান প্রদেশের শহরগুলো স্থাপত্যশৈলির বিশেষত্বের কারণে, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হবার কারণে ইরানের মধ্যে পর্যটন এলাকা হিসেবে যথেষ্ট মর্যাদার অধিকারী। গিলান প্রদেশে আনুমানিক ত্রিশটি শহর আছে। প্রশস্ততা, জনসংখ্যা এবং এলাকাগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এখানকার শহরগুলোর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। জনসংখ্যার দিক থেকে এখানকার শহরগুলোর মধ্যে কমবেশি পার্থক্য থাকলেও কাছাকাছি অবস্থানের কারণে পারস্পরিক কল্যাণ এবং সহযোগিতায় সবাই এগিয়ে আসতে পারে। এমনকি ছোট্ট শহরগুলোতেও বড়ো বড়ো শহরগুলোর উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।

বাগে মুহতাশিম

প্রথমেই আমরা গিলান প্রদেশ এবং রাশ্‌ত শহরের কেন্দ্রিয় শহর রাশতে যাবো। রাশতের মাটি ভীষণ উর্বর। এখানকার আবহাওয়াও বেশ উপভোগ্য। রাশতের অর্থনৈতিক অবস্থান বেশ উন্নত। এছাড়াও এই শহরটি ধান চাষ, তামাক চাষ, চায়ের বাগান করা এবং রেশম পোকার চাষের জন্যে বেশ খ্যাতিমান। এই শহরটি প্রাচীনকালে ছিল ইউরোপের সাথে ইরানের যোগাযোগের একমাত্র পথ- এমনটাই মনে করা হয়। রাশত উপশহরটি কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে অবস্থিত। অন্যদিক থেকে আলবোর্য পর্বতমালার উত্তরে পড়েছে শহরটি। বন্দর আনযালি উপশহরের দক্ষিণে পলিময় ভূমিতে এই রাশত শহরটির অবস্থান। রাশত শহরের পূর্বদিকে রয়েছে সিয়হ রুদবর নদী আর পশ্চিম দিকে রয়েছে গওহর রুদ নদী। তবে শহরের উত্তরাঞ্চলে গিয়ে এই দুটি নদী পরস্পরে মিলে গেছে এবং আনযালি জলাভূমিতে গিয়ে পড়েছে।

ঐতিহ্যবাহী রাশত বাজার

রাশত শহরে বৃষ্টিপাতের মাত্রা একটু বেশি। এর কারণ হলো শহরটি সমুদ্রের কাছে অবস্থিত এবং কাস্পিয়ান সাগরীয় বাতাসের প্রবাহ। এখানকার বাতাস রাশতের উত্তর পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ব্যাপক মাত্রায় বয়ে যায়। এ কারণেই এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি। সমগ্র ইরানের মধ্যেই এই এলাকাটিকে সবচেয়ে বৃষ্টিপাতবহুল এলাকা বলে গণ্য করা হয়। রাশত শহরের মূল অধিবাসীরা ছিল ‘গিল’ নামের স্থানীয় একটি গোত্রের লোকজন। এই গিল গোত্র খ্রিষ্টপূর্ব বহু বছর আগে রাশতের বর্তমান এই অঞ্চলেই বসবাস করতো। ঐতিহাসিক তথ্যপঞ্জিতে এসেছে, খুব সম্ভবত ইসলাম পূর্বকালেও এই রাশত শহরটির অস্তিত্ব ছিল। এর প্রাচীনত্ব সাসানীয় শাসনামল পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসলামী যুগে সেই সাফাভি শাসনামল পর্যন্ত রাশতের আয়তন খুব বেশি ছিল না, তবে দ্বিতীয় শাহ আব্বাসের সময় থেকে কাজারি শাসনের শেষ পর্যন্ত রাশত বড়ো ধরনের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। বাণিজ্যিক কাফেলা সে সময় এই শহরে অবস্থান করতো এবং তাদের পণ্য সামগ্রী এই শহরের মধ্য দিয়েই ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো হতো।

রাশত বাগিচার দ্বিতল ভবন

সৌন্দর্যের বিবেচনায় এই রাশত শহরে রয়েছে দর্শনীয় বহু নিদর্শন। স্থাপত্য শৈলীর দিক থেকে এখানকার বিল্ডিংগুলোর দিকে তাকালে বুঝতে পারা যাবে কতো বিচিত্র পদ্ধতি এবং কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে এইসব স্থাপনা নির্মাণে। রাশতের প্রধান অঙ্গন সিটি কর্পোরেশন স্কোয়ার- যা এখন শোহাদা স্কোয়ার নামে পরিচিত- সেখানে গেলে এরকম বিচিত্র স্থাপত্যরীতির সাথে পরিচয় ঘটবে। মাঠের চারপাশ জুড়ে গায়ে গা লাগানো এরকম ভবনের পর ভবন দেখতে পাওয়া যাবে। রাশতের অনেক পুরোণো ভবনও স্থাপত্যরীতির দিক থেকে, নকশার দিক থেকে এবং চকের কারুকাজের দিক থেকে অনেক মূল্যবান। এগুলোর শৈল্পিক মূল্যও প্রচুর। এইসব বিচিত্র গুণের কারণেই প্রাচীন এই ভবনগুলো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী সরাইখানা

যেসব পর্যটক গিলান পরিদর্শন করেছেন, তাদের অনেকেই গিলান নিয়ে লেখালেখি করেছেন। গিলানের বিভিন্ন দিকের বর্ণনা দিয়ে গেছেন তাঁরা তাঁদের লেখায়। জার্মান এক পর্যটক ট্রেযেল উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে গিলান সফর করেছেন। তিনি রাশত সফর করে সেখানকার বাড়িঘর সম্পর্কে লিখেছেনঃ রাশত শহরের আরো অনেক দর্শনীয় দিকের পাশাপাশি সিটি কপোরএরশন পার্ক কিংবা মুহতাশেম বাগানের কথা উল্লেখ করা যায়। এই বাগানটির বয়স ১৩০ বছর। পার্কটির বিশাল উঁচু গাছ গাছালি বিশেষ করে চেনর বৃক্ষ এই পার্কটিকে আলাদা মর্যাদায় ভূষিত করেছে। এ কারণেই যিনিই এই পার্কটি পরিদর্শন করবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানকার বড়ো বড়ো গাছের পর গাছের ছায়ায় সময় না কাটিয়ে পারেন না।

রাশত মিউজিয়াম

বাগে মুহতাশিমের একটি অনন্য আকর্ষণ হলো এখান চমৎকার একটি দ্বিতল ভবন। ভবনটির প্রত্যেক তলায় দুটি করে রুম রয়েছে। এই ভবনটির আয়তন প্রায় ২৪০ বর্গমিটার। ভবনটির আকৃতি বহু কোণ বিশিষ্ট। নীল রঙের পিলার, লাল রঙের মৃৎশিল্পের সজ্জায় এর ছাদ সুসজ্জিত ও অলংকৃত। এরকম অনন্য কারুকাজের জন্যে সমগ্র রাশতের মধ্যেই এই ভবনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। আগেকার দিনে এই ভবনটির বিশাল একটি আঙিনা ছিল যার আয়তন ছিল সাত হাজার মিটারের মতো। এখানে তখনকার দিনে বাস করতো গিলানের শাসকরা।

রাশতের অপর একটি দর্শনীয় স্থাপনা হলো এখানকার বাজারটি। প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর জন্যে এই বাজারটির শৈল্পিক মূল্য ব্যাপক। দৈনিক হাজার হাজার মানুষ এই শহর এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন শহর এবং গ্রাম থেকে এই বাজারটি দেখতে আসে। দেখতে এসে কেনাকাটাও করে প্রচুর। বিচিত্র কৃষি পণ্যের বাইরেও এখানে পাওয়া যায় দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী। তাছাড়া এখানে আছে প্রাচীন অনেক সরাইখানা। এইসব সরাইখানা রাশত বাজারের অন্যতম আকর্ষণ বিশেষত পর্যটকদের জন্যে। অসংখ্য সরাইখানা রয়েছে এখানে। কাজারি শাসনামল এবং পাহলাভি শাসনামলের শুরুর দিকে এগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বলে বর্ণনায় এসেছে।

রাশত মিউজিয়ামও এখানকার আরেকটি দর্শনীয় স্থাপনা। এটি আসলে মির্যা হোসাইন খান কাসময়ি নামক বিখ্যাত কবি এবং সাংবাদিকের বাড়ি ছিল। ১৩৪৯ সালে এই বাড়িটিকে যাদুঘরে পরিণত করা হয়। এখন এই মিউজিয়ামটি জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/২৫/টি-৫৯/ই-৫৯