তেলআবিবে হামাসের শাহাদাত-পিয়াসি হামলা সন্ত্রাসী তৎপরতা: তুরস্ক!!!
তুর্কি সরকারের ইসরাইল-প্রীতি জোরদারের নানা অজুহাত ও প্রকৃত সত্য
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে তুরস্কের এরদোগান সরকারের নজিরবিহীন ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ ও পর্যবেক্ষক মহলের ব্যাপক আলোচিত বিষয়।
ইরাক ও সিরিয়ায় তুরস্কের এরদোগান সরকারের হস্তক্ষেপকামী নীতি বা সামরিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের পর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ে সংকট জোরদার হয়েছে।
পশ্চিমা শক্তিগুলো ও তাদের আঞ্চলিক সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তুরস্কের এরদোগান সরকার ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে এই দুই দেশের সরকারগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও। এ বিষয়টি ছাড়াও ইহুদিবাদী ইসরাইল, মিশর, আমিরাত, সৌদি আরব ও বাহরাইন সরকারের সঙ্গে তুরস্কের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এরদোগান সরকারের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
অবশ্য এরদোগান সরকার বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে কখনও স্বাধীন নীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করতে গিয়েও নানা সমস্যার শিকার হয়েছে। যেমন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সামরিক তৎপরতায় ক্ষুব্ধ হয়েছে পাশ্চাত্য। ফলে ইউরোপীয় ও পশ্চিমা শক্তিগুলো এ অঞ্চলে ও এমনকি সিরিয়ার ক্ষেত্রেও তুরস্কের স্বার্থের বিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে।
পাশ্চাত্যের সঙ্গে তুরস্কের উত্তেজনার ফলে দেশটির অর্থনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে একের পর এক নানা সংকট। আর এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তুরস্কের এরদোগান সরকার গত বছরের শেষের মাসগুলোতে ইহুদিবাদী ইসরাইল, মিশর, আমিরাত, ও সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের নীতি গ্রহণ করেছে অতীতের নীতি থেকে সরে এসে। এরদোগান সরকারের এই নীতিকে অবমাননাকর হিসেবে বিবেচনা করছে তুরস্কের ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্য দলগুলো। এরদোগান সরকারের এইসব ডিগবাজি বা নীতির পরিবর্তন দেশটির সংকট ও সমস্যাগুলো তো কমায়নি বরং এসব সমস্যা ও সংকট আরও জোরালো হয়েছে।
করোনা মহামারি, বেকারত্ব ও আংকারার হস্তক্ষেপকামী বৈদেশিক নীতির ফলে সৃষ্ট বিদেশী শরণার্থী সংকটসহ নানা কারণে তুরস্কের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে এবং দেশটির মুদ্রার মানও অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় ইহুদিবাদী ইসরাইল, মিশর, আমিরাত, ও সৌদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে এরদোগান সরকার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার আশা করছে।
সম্প্রতি এরদোগানের আমন্ত্রণে ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট তুরস্ক সফর করেছেন। ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের প্রতি এরদোগানের বেশ বিনম্র আচরণ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ব্যাপারে তার নিরবতা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
মুসলমানদের প্রথম কিবলার দখলদার বর্ণবাদী ইসরাইলের সঙ্গে এরদোগান সরকার সব সময়ই রমরমা বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ফিলিস্তিনিদের ভেঙ্গে ফেলা ঘরবাড়ির ওপর ইসরাইলিদের জন্য যে অবৈধ বসতি নির্মাণ করা হয় সেসব নির্মাণ সামগ্রী আসে তুরস্ক থেকে। ইসরাইলের পর্যটকরা নিয়মিত সফর করে তুরস্ক। তুর্কি-ইসরাইল যৌথ সামরিক মহড়াও নিয়মিত বজায় ছিল। তাই এরদোগান ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রশ্নে মাঝে মধ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গরম ও উত্তেজক বক্তব্য রাখলেও সেসব যে স্রেফ আইওয়াশ বা লোক-দেখানো তৎপরতা তা বুঝতে পারা কারো জন্যই কঠিন থাকার কথা নয়।
সম্প্রতি হামাসের একজন সদস্য ইসরাইলি দখলদারদের বিরুদ্ধে তেলআবিবে যে শাহাদাত-পিয়াসি হামলা চালিয়েছে ইসরাইলে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত তাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করে নিন্দাবাদ জানিয়েছেন! এ ধরনের হামলা বৃদ্ধির ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন! তুর্কি দূতাবাস নিহত ইসরাইলিদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছে! হামাস তুর্কি দূতাবাসের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটের দোহাই দেখিয়ে এরদোগানের তুর্কি সরকার জালিম ও তাগুতি সরকারগুলোর সঙ্গে ও বিশেষ করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ নিলেও দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর ফলে উন্নত হবে না। কারণ তুরস্কের অর্থনৈতিক সমস্যার আসল কারণ তথা ইরাক ও সিরিয়ায় তুর্কি দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকলে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকটও অব্যাহত থাকবে। আর ফিলিস্তিনের ব্যাপারে এরদোগান সরকারের দ্বিচারিতা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনি জাতিও এই সরকারকে কখনও আপন বলে মনে করবে না। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/৯