সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তুরস্কের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের রহস্য
(last modified Wed, 24 Aug 2022 14:13:21 GMT )
আগস্ট ২৪, ২০২২ ২০:১৩ Asia/Dhaka
  • সিরিয়ার ভেতরে তুর্কি  সেনা (ফাইল ছবি)
    সিরিয়ার ভেতরে তুর্কি সেনা (ফাইল ছবি)

সিরিয়ার বাশার আল আসাদের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তুর্কি কর্মকর্তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রেখেছেন।

সম্প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, তুরস্ক সিরিয়ার রাজনৈতিক কাঠামো থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে না।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলুদ চাভুস উগলুও বলেছেন, সিরিয়া ও তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে তুরস্কের কোনো পূর্ব-শর্ত নেই এবং সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে হবে লক্ষ্য-ভিত্তিক। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। 

দৃশ্যত তুর্কি কর্মকর্তারা সিরিয়ার আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে অস্পষ্ট ও পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য রেখে দামেস্কের সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে আঙ্কারার অবস্থানকে শক্তিশালী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন এবং এভাবে সিরিয়ার কাছ থেকে বিশেষ ছাড় আদায়ের আশা করছেন যাতে সিরিয়ায় তুর্কি সেনা পাঠানোর বিষয়ে সাফাই দেয়া যায়। কিন্তু এটা স্পষ্ট দামেস্ক সরকারের সঙ্গে এরদোগান সরকারের যে কোনো আলোচনার অর্থই হচ্ছে আগের অবস্থান থেকে তুর্কি সরকারের পিছু হটা। 

বাস্তবতা হল এরদোগান সরকার হামবড়া ভাব দেখিয়ে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার মত উঁচু অবস্থানেও নেই। কারণ, তুর্কি সরকার ইরাক ও সিরিয়ার সবটুকু সামরিক শক্তি খাটিয়েও যেসব লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছিল সেসব অর্জন করতে পারেনি। 

অন্যদিকে তুর্কি সরকার সিরিয়ার সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও আরব এই দেশটির ভেতরে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি দেয়াও অব্যাহত রেখেছে। সিরিয়ায় মাঝে মধ্যেই সামরিক অভিযান চালাতে চায় তুর্কি বাহিনী এবং এতে সিরিয়দের জান ও মালের আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধন তুর্কি সরকারের লক্ষ্য। 

এ অবস্থায় যে দুটি সম্ভাবনা ফুটে ওঠে তা হল তুর্কি সরকার আসাদ সরকারের সঙ্গে বাধ্য হয়েই আলোচনায় বসছে অথবা তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট ও ঘরোয়া সমস্যাগুলোর সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এ নির্বাচনে এরদোগান পরাজিত হলে সিরিয়া ও ইরাকের ব্যাপারে তুরস্কের সব নীতিই আবারও এরদোগানের শাসন-পূর্ববর্তী যুগের সেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।

তাই তুরস্কের ভেতরে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে ও বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল রাখতে এরদোগান সিরিয়া ও ইরাকের ব্যাপারে নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তুরস্কের বিখ্যাত সাংবাদিক অধ্যাপক বরেশ দুস্ত আর-এর মতে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা বাধ্য হয়েই করছেন এরদোগান এবং অতীতের ভুল নীতির মাশুল দিচ্ছেন তিনি। তার মতে এরদোগানের টিম বাশার আসাদের ক্ষমতা, প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ব্যাপকতার মাত্রা বুঝতে ভুল করেছিল। 

এরদোগান পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নব্য-অটোম্যানিজম প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিল বিপুল অর্থ ও শক্তি ক্ষয় করেও আশানুরূপ মাত্রায় তা অর্জন করতে পারেনি। তুরস্কে জনমত জরিপে এরদোগানের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস নামার কারণে নির্বাচনের বেশ আগেই সংস্কারমূলক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়াতে চান এরদোগান। তাই ইরাক থেকেও তুর্কি সেনা সরিয়ে নেয়ার জন্য পটভূমি সৃষ্টি করা এরদোগানের জন্য জরুরি। কারণ ইরাকে তুর্কি সেনা উপস্থিতি অব্যাহত থাকায় দেশটির জনগণ ও সরকার ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতে এ দিক থেকেও এরদোগানের জন্য সংকট বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।  #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৪

       
 

ট্যাগ