জেনিনে ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত; শহীদ সিনওয়ারের সাহসিকতার ভিডিও দেখে ইসরাইলিরা বিস্মিত
পার্সটুডে- গাজা যুদ্ধের মতো ধ্বংসাত্মক ও নৃশংস পদ্ধতি ব্যবহার করে টানা পঞ্চম দিনের মতো পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাদের বর্বর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
টানা পঞ্চম দিনের মতো, দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা যুদ্ধের মতো একই ধ্বংসাত্মক কৌশল ব্যবহার করে জেনিন শহর এবং পশ্চিম তীরের উত্তর অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে হামলা অব্যাহত রেখেছে। পার্সটুডে-র মতে, জেনিনের মিথলোন শহরে ইসরাইলি হামলার সময় বেশ কয়েকজন আহত হয় এবং ওই এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ চলছে।
একই সাথে, দখলদাররা পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় তাদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী পশ্চিম তীরের উত্তরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে বেশ কয়েকজন বন্দীর বাড়িতেও হামলা চারায়, যাদের বন্দী বিনিময় এবং গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।
গাজা যুদ্ধে পরাজয় এড়াতে ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে; ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তারা যুদ্ধে তাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর জেনারেল আইজ্যাক বারিক এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেছেন: "ইসরাইলি সেনাবাহিনী হামাসের মোট শক্তির ১০ শতাংশেরও কম ধ্বংস করতে পেরেছে এবং ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তারা সত্য বলতে ভয় পাচ্ছেন।"
আইজ্যাক বারিক আরও বলেন: "ইসরাইল হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি এবং হামাসের মতো খুব ক্ষুদ্র একটি সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করতে পারেনি। তাই হামাসকে ধ্বংস করার দাবি করে আমরা যেসব আনন্দ ও বিজয় উৎসব পালন করছি তা অর্থহীন।"
গাজা যুদ্ধে পরাজয়ের পরিণতি ইসরাইল সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ইসরাইলিদের অধিকাংশই বিশ্বাস করেন যে ৭ অক্টোবরের (আল-আকসা তুফান) অভিযানের ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত।
ইসরাইলি সংবাদপত্র মাআরিভ কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ইসরাইলি বলেছেন যে ৭ই অক্টোবরের নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহু দায়ী। ইহুদিবাদী সরকারের উপর যুদ্ধের পরাজয়ের ছায়া যখন ঘনীভূত তখন আল জাজিরার তথ্যচিত্রে শহীদ সিনওয়ারের সাহসিকতা প্রকাশের পর ইসরাইলি মিডিয়াতে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
আল জাজিরার ওই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায়, ইসরাইলি টিভি চ্যানেল 'চ্যানেল-১২' ঘোষণা করেছে: "এই তথ্যচিত্রটি ব্ল্যাক স্যাটারডেতে তেল আবিবের গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।"

ইসরাইলি টিভি চ্যানেল আরও জানিয়েছে: "আল জাজিরার পরিচালিত একটি তদন্তে এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে যা থেকে প্রমাণ হয় যে ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আল-আকসা তুফান অভিযানের আগে হামাসের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ডিভাইস ছিল।"
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে আল জাজিরার প্রকাশিত এই তথ্যপ্রমাণ থেকে আগাম হামলা প্রতিরোধে ইসরাইলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং অক্ষমতা ফুটে উঠেছে।
ইসরাইলের এই টিভ চ্যানেলের প্রতিবেদন অনুসারে, আল জাজিরার তদন্তে রাফাহর তাল সুলতান এলাকায় গোপনে যুদ্ধ পরিচালনার প্রশিক্ষণের সময় ইয়াহিয়া সিনওয়ারের গতিবিধি দেখা গেছে।
ইহুদিবাদী গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে: আল জাজিরার তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে যে সিনওয়ার রাফাহর একটি বাড়িতে মানচিত্র পর্যালোচনা করছিলেন যেখানে আগে সেনাবাহিনী কাজ করত।
মা'আরিভ সংবাদপত্র আরও লিখেছে: আল জাজিরা কর্তৃক সম্প্রচারিত তথ্যচিত্রটি এটাও নিশ্চিত করে যে সিনওয়ার যুদ্ধের সময় রাস্তায় থাকতে ভয় পাননি।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।