অবরোধ ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত;
জেনিন ও তুলকারামে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাতের প্রক্রিয়া কি শুরু হয়েছে?
-
জেনিন ও তুলকারামে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাতের প্রক্রিয়া কি শুরু হয়েছে?
পার্সটুডে- ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অব্যাহত অপরাধযজ্ঞের অংশ হিসাবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জেনিন এবং তুলকারামের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে।
সোমবার টানা চৌদ্দতম দিনের মতো পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনী তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। পার্সটুডে জানিয়েছে, এই হামলায় "আহমদ আব্দুল হালিম আল-সাদি" নামে একজন ফিলিস্তিনি কিশোরসহ ছয়জন ফিলিস্তিনি শহীদ এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গত মাসে হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জেনিনে কমপক্ষে ২৬ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।
দখলদার বাহিনী টানা অষ্টম দিনের মতো তুলকারাম এলাকা এবং সেখানে অবস্থিতি শরণার্থী শিবিরের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে।
একই সময়ে, ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ওই এলাকায় আরো হামলা চালানোর জন্য ইসরাইল অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে।
দখলদাররা পশ্চিম তীরের রামাল্লার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি গ্রামেও হামলা চালিয়েছে। নাবলুসের পূর্বে অবস্থিত বেইত ফুরিক শহরটিও দখলদার বাহিনীর আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি।
গতকাল, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা যুদ্ধের কৌশলের মতো পশ্চিম তীরেও এক ডজনের বেশি বাড়িঘর বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করেছে এবং এ ঘটনায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
এই হামলার পর, ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জেনিন এবং তুলকারাম শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের ক্রমাগত আক্রমণ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন।
পশ্চিম তীরে, বিশেষ করে জেনিনে ইসরাইলি সেনাদের অপরধযজ্ঞের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কমিটিগুলো জোর দিয়ে বলেছে যে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলের এসব আগ্রাসন গাজায় গণহত্যার ধারাবাহিকতা মাত্র।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ কমিটিগুলো জোর দিয়ে বলেছে যে পশ্চিম তীরের প্রতিরোধের শেকড় গভীরে প্রোথিত এবং তারা অবিচল রয়েছে। ফলে ইহুদিবাদী ইসরাইল কখনই তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে না।
ফিলিস্তিনি ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস জানিয়েছে: "জেনিনে ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধযজ্ঞ এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস কখনই আমাদের জাতিকে তাদের ইচ্ছা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না বরং ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসন প্রতিরোধের চেতনাকে আরো দৃঢ় করবে।"
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আক্রমণের একই সাথে, গাজার হামাস জানিয়েছে যে ইসরাইলি সরকার ত্রাণ সরবরাহ, সাহায্য প্রেরণ এবং গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন সম্পর্কিত কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে। অথচ এসব শর্তের ওপর ভিত্তি করেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল।
হামাস আরেকটি বিবৃতিতে আরও যোগ করেছে: "দখলদারদের দ্বারা নির্যাতনের পর ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় যা থেকে ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।"
হামাস উল্লেখ করেছে: "ফিলিস্তিনি বন্দীদের সাথে এই আচরণ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই অপরাধ বন্ধ করতে হবে এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।"
এই অপরাধগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে যখন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নতুন চিফ অফ স্টাফ ইয়াল জামির, তার নিয়োগের একদিন পর যুদ্ধ অব্যাহত রাখা, অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং অস্ত্র উৎপাদনের বাজেট বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কথা বলেছেন।
যুদ্ধ এখনও চলমান রয়েছে উল্লেখ করে ইয়াল জমির বলেন: "যুদ্ধ শেষ হয়নি এবং চ্যালেঞ্জগুলো এখনও সামনে রয়েছে। তাই ২০২৫ সাল হবে যুদ্ধের বছর ।"
এই পরিস্থিতিতে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ট্রাম্পের সাথে নেতানিয়াহুর দেখা করার কথা রয়েছে। এ বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন গাজা উপত্যকা এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।