হামাসের সাথে সরাসরি মার্কিন আলোচনা ইসরাইলের জন্য কৌশলগত ব্যর্থতা
-
হামাসের সাথে সরাসরি মার্কিন আলোচনা ইসরাইলের জন্য কৌশলগত ব্যর্থতা
পার্সটুডে-ইসরাইলি গণমাধ্যমের এক ইহুদি বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী সরকারের মধ্যকার বিশেষ সম্পর্ক ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
পার্সটুডে আরও জানায়, ইসরাইলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ইসরাইল-আমেরিকা সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আব্রাহাম বেন-তসফি ওই মন্তব্য করেছেন। ইসরাইলি সংবাদপত্র দৈনিক হায়োম-য়ে (ইসরাইল টু-ডে) তিনি লিখেছেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের মধ্যে ছয় দশকের কৌশলগত এবং কূটনৈতিক গভীর সম্পর্ক যৌথ মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ওই যোগাযোগ 'বিশেষ সম্পর্ক' অভিধায় পরিচিতি পেয়েছিল। এখন তা এমন এক ক্রান্তিলগ্নে পৌঁছেছে যে তাদের জোটের ভবিষ্যত বিপন্ন হবার পর্যায়ে রয়েছে।
বেন তসফি লিখেছেন: ট্রাম্প এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খুব দ্রুততার সঙ্গে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে সরাসরি সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
লেখকের মতে, গাজা যুদ্ধের দ্রুত অবসান ট্রাম্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যিনি একজন নির্ণায়ক নেতা হিসেবে তার উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে নিরলসভাবে চেষ্টা করেন বড় সংকট সমাধানের জন্য অথবা অন্তত সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। ট্রাম্প নিজেকে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। যদিও গাজা যুদ্ধকে তিনি আমেরিকার আধিপত্যের অধীনে পশ্চিম এশীয় অঞ্চলকে নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখেন।
বিন তসফি আরও বলেন: এই লক্ষ্য অর্জন ওয়াশিংটন এবং পারস্য উপসাগরের আরব দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতিতে বিশাল বিনিয়োগের বিনিময়ে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে এ অঞ্চলে তাদের সামরিক অবস্থান বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই পদ্ধতিতে হোয়াইট হাউসের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল নয়া আঞ্চলিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্যমান হুমকি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমেরিকার সহায়তায় একটি বিস্তৃত কূটনৈতিক ও কৌশলগত জোট তৈরি করা।
বেন-তসফি সতর্ক করে বলেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী সরকারের মধ্যকার বিশেষ সম্পর্ক এখন নজিরবিহীন চাপের মধ্যে রয়েছে। কারণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বামপন্থী দলের দৃষ্টিতে এই সম্পর্ক মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত। রিপাবলিকান পার্টির বিচ্ছিন্নতাবাদী শাখাও এ ব্যঅপারে অসন্তোষ দেখাচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরও বলেন: "এই পরিস্থিতি হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহুর প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশা, ক্ষোভ এবং মোহভঙ্গের সৃষ্টি করেছে। এই অসন্তোষ এখন প্রকাশ্যে প্রকাশ করা হচ্ছে।
বেন-তসফি বলেন: ট্রাম্প এবং তার মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ হুইটকফ গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের অব্যাহত উপস্থিতির কৌশলগত যুক্তি মেনে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ তাদের দৃষ্টিতে এই যুদ্ধ অর্থহীন এবং লক্ষ্যহীন।
এই ইসরাইলি ইহুদিবাদী বিশ্লেষক এ অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে। 'আইদান আলেকজান্ডার' এর মুক্তিসহ, যিনি দ্বৈতভাবে ইসরাইলি-আমেরিকান বন্দী ছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি আলোচনার পর হামাস তাকে মুক্তি দিয়েছিল।
তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে শেষ করেছেন এভাবে: যুদ্ধের পর গাজা শাসনে হামাসের রাজনৈতিক ভূমিকা নিকট ভবিষ্যতে গৃহীত হতে পারে। এমনকি যদি কেবল প্রতীকীভাবেও হয়। এটাও সম্ভব যে ইহুদিবাদী সরকারের সাথে পরামর্শ না করেই ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করা এবং সৌদি আরবের সম্মতি ছাড়াই তাদের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিকে সমর্থন করা ভবিষ্যতের উন্নয়নের অংশ হতে পারে।#
পার্সটুডে/এনএম/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।