গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের একচেটিয়া প্রভাব কীভাবে কমল?
-
যুদ্ধাহত এক ফিলিস্তিনি শিশু
পার্সটুডে : ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা- বিশেষ করে গাজায় সংঘটিত গণহত্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হলো- ইহুদিবাদী গণমাধ্যমের দীর্ঘদিনের একচেটিয়া প্রভাবের অবসান।
দখলদার ইসরায়েল বহু বছর ধরে চেষ্টা করেছে যাতে গাজার ওপর তার নৃশংসতা বিশ্বের মানুষের চোখের আড়ালে থাকে। পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনপুষ্ট গণমাধ্যমগুলোও ইসরাইলের অপরাধগুলো প্রকাশে বিরত থেকেছে। কিন্তু বাস্তবে উল্টো ঘটনা ঘটেছে—আজ বৈশ্বিক জনমত ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
প্রশ্ন হলো, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের একচেটিয়া প্রভাব কীভাবে কমল?
প্রথমত, ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা, যেখানে নারীদের ও শিশুদের পর্যন্ত ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজায় প্রবেশ করতে চাওয়া বিভিন্ন জাহাজ বহরকে ইসরাইলি বাহিনী আটকে দিয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো "গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা"-এর ওপর আক্রমণ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিকামী মানুষ যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিয়ে গঠিত এই ফ্রিডম কনভয়গুলোর উপর হামলা একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তেমনি কনভয়ের সদস্যদের মাধ্যমে এই ঘটনা প্রচারিত হয়ে ইসরাইলি গণমাধ্যমের বয়ানকে ভেঙে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলি হামলায় সাংবাদিকরাও সরাসরি টার্গেট হয়েছেন। ইতোমধ্যেই ২৫৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ফলে মূলধারার বাইরে থাকা গণমাধ্যম, স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গাজায় গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে ইসরায়েলবিরোধী এক বিস্তৃত গণমাধ্যম ফ্রন্ট গড়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত, জাতিসংঘের বিভিন্ন স্বাধীন অঙ্গ ও অসংখ্য এনজিও ইসরাইলি অপরাধের প্রমাণসমৃদ্ধ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে গাজায় সংঘটিত অপরাধকে স্পষ্টভাবে 'গণহত্যা' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিশেষজ্ঞদের এসব বক্তব্য পশ্চিমা প্রচারণার সেন্সর ভেদ করে বৈশ্বিক জনমতকে আরও সচেতন করেছে।
সবশেষে, নির্ণায়ক আঘাতটি এসেছে বিশ্বজনমতের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ, ক্রীড়া আসরে দর্শকদের প্রতিবাদ, এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া—সবই ইসরায়েলকে অভূতপূর্বভাবে একঘরে করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সভা ত্যাগ করাই প্রমাণ করে, ইসরায়েল আজ আন্তর্জাতিক পরিসরে চরমভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/৪