৭ অক্টোবরের অভিযান ফিলিস্তিনকে বিশ্ব বিপ্লবের দিকনির্দেশকে পরিণত করেছে
-
ইউরোপে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভের চিত্র
পার্সটুডে- লেবাননের লেখক ও চিন্তাবিদ ইমাদ আল-হাতাবা বলেছেন, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ৭ অক্টোবরের অভিযানটি কেবলমাত্র একটি সামরিক পদক্ষেপ বা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল না; এটি ছিল ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সন্ধিক্ষণ। এটি নিপীড়িত জাতিগুলোর চেতনায় এবং বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামের পথে একটি ঐতিহাসিক বাঁক।
ইমাদ আল-হাতাবা'র “৭ অক্টোবর ও বিপ্লবের বিশ্বায়ন” শিরোনামের নিবন্ধটি আল-মায়াদিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সেখানে লিখেছেন- "ঐ দিনের ঘটনাগুলো সঠিকভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না, যদি তা নিপীড়িত জাতিগুলোর সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশবাদের বৈশ্বিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে না দেখা হয়।”
পার্সটুডের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হাতাবা সতর্ক করে বলেছেন- “জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে ব্যক্তিগত বা জাতিগত ইস্যুতে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়, যা বৈশ্বিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।” তার মতে, “উপনিবেশবাদী শক্তি ও নিপীড়িত জাতিগুলোর সম্পর্ক মূলত বিরোধপূর্ণ ও চিরস্থায়ী এবং এই প্রধান বৈপরীত্যটি উপলব্ধি করতে পারলে অন্যান্য বিরোধও দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।”
ঐ নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে- “ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম, যা ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে তা অভিজ্ঞতা ও সচেতনতার এক বিশাল ভাণ্ডার তৈরি করেছে। বিশেষকরে দুটি স্তরে- এক- মাঠের প্রতিরোধে এবং সংঘর্ষের তাত্ত্বিক উপলব্ধিতে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ছিল সেই সচেতনতার শীর্ষবিন্দু যখন একটি সীমিত সীমান্ত-সংঘর্ষ এক সর্বজনীন গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এটি কেবল কোনো গোষ্ঠীর নয় বরং ফিলিস্তিনি জনগণের অন্তর থেকেই জ্বলে ওঠা এক আগুন ছিল।”
জনসচেতনতাই আল আকসা তুফানের মূল উৎস
হাতাবা পশ্চিমাদের সেই উপনিবেশবাদী বয়ানকে প্রত্যাখ্যান করেন যেখানে ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে হামাস বা ইসলামি জিহাদের মতো সংগঠনের “সন্ত্রাসী হামলা” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন, “এই বয়ানটি প্রতিরোধকে অপমানিত করার ও গণহত্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ার হাতিয়ার। সাম্রাজ্যবাদী কাঠামো তাদের নিজস্ব গল্প বলেছে, আর কিছু বুদ্ধিজীবীও সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। কিন্তু যারা নির্বাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, নিজের ভূমিতে থেকেছেন ও সেটিকে রক্ষা করেছেন — তারা ফিলিস্তিনের জনগণ।”
হাতাবার মতে, এই জনসচেতনতা ছিলই “তুফান আল-আকসা”-র প্রকৃত জন্মদাতা এবং এই সচেতনতাই দানবীয় ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়ার মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “৭ অক্টোবর কোনো ক্ষণস্থায়ী বা কেবল সামরিক ঘটনা ছিল না; এটি ছিল এক সত্যিকারের বিপ্লব, যেখানে ফিলিস্তিনিরা তাদের জাতীয় মুক্তির যুগের প্রতি সমষ্টিগত চেতনা প্রকাশ করেছে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “গাজায় যা ঘটেছে, তা স্থানীয় কোনো ঘটনা নয় বরং এটি একটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের অংশ; ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয় বরং বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ ও মুক্তিকামী শক্তিগুলোর মধ্যকার দীর্ঘ সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূতিকাগার।”
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া: ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
হাতাবার মতে, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কোনো তাৎক্ষণিক বা আকস্মিক সিদ্ধান্ত ছিল না; এটি ছিল বহু বছর ধরে সাজানো এক ঔপনিবেশিক পরিকল্পনার অংশ। পাশাপাশি ৭ অক্টোবর কোনো ব্যক্তিগত বা সংগঠনের সিদ্ধান্ত ছিল না বরং এটি ছিল ফিলিস্তিনি জনগণের সমষ্টিগত সচেতনতার প্রাকৃতিক ফল, যারা উপলব্ধি করেছিল যে, বিপ্লবের সময় এসে গেছে।
তিনি লিখেছেন: “যখন চেতনা তার চূড়ান্ত বিন্দুতে পৌঁছায়, তখনই বিস্ফোরণ ঘটে কারণ ফিলিস্তিনিরা বুঝেছিল, আজই সময়, আগামীকাল মানেই খুব দেরি হয়ে যাবে।”#
পার্সটুডে/এসএ/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।