ইসরায়েলে উল্টো অভিবাসনের স্রোত: দখলকৃত ভূখণ্ড ছাড়ছে কারা, যাচ্ছে কোথায়?
-
ইসরায়েল থেকে ছেড়ে পালাচ্ছে ইহুদিরা
পার্সটুডে: দখলকৃত ভূমি থেকে বিপরীত অভিবাসনের ঘটনাকে সাম্প্রতিক বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যাগত ও রাজনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এমন একটি ঘটনা যা একটি সীমিত ও অস্থায়ী প্রবণতা অতিক্রম করে এখন ইসরায়েলেরর জন্য একটি কাঠামোগত সংকটে পরিণত হয়েছে।
পার্সটুডে'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে জনসংখ্যাগত প্রবণতাগুলো দেখাচ্ছে যে, দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে ইহুদি বাসিন্দাদের বেরিয়ে যাওয়া শুধু বাড়েনি, বরং অভিবাসীদের ধরণও বদলে গেছে।
আগের সময়গুলোতে যেখানে অভিবাসন মূলত প্রান্তিক গোষ্ঠী বা অসন্তুষ্ট সংখ্যালঘুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এখন বিশেষজ্ঞ কর্মী/পেশাজীবী, শিক্ষিত ব্যক্তি, প্রযুক্তি শিল্পের কর্মী, মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং ধর্মনিরপেক্ষ ইহুদিরা ইসরায়েলি অভিবাসীদের শীর্ষে রয়েছেন।
এই পরিবর্তন ইসরায়েলের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোর জন্য গভীর পরিণতি বয়ে এনেছে; কারণ প্রতিটি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির প্রস্থান, অনুমান অনুযায়ী, বছরে এই অবৈধ রাষ্ট্রের জন্য প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টি করে।
এই ব্যাপক অভিবাসনের মূল কারণ হল নিরাপত্তার ধারণার পতন। অক্টোবর ২০২৩-এ 'অপারেশন আল-আকসা তুফান' থেকে শুরু করে ২০২৫ সালে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পর্যন্ত, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কাঠামো বারবার তার অকার্যকরিতা প্রদর্শন করেছে। বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরের বন্ধ, সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের বাধ্যতামূলক স্থানান্তর এবং প্রস্থানের আবেদন বৃদ্ধি, সবই ইসরায়েলেরর প্রতিরক্ষা সক্ষমতার উপর জনগণের আস্থা কমার লক্ষণ।
একই সময়ে, নিরাপত্তা সংকটের পাশাপাশি, দখলকৃত ভূমিতে অর্থনৈতিক সংকটও তীব্রতর হয়েছে, ৬০ হাজারেরও বেশি ব্যবসার দেউলিয়াত্ব, বেকারত্ব বৃদ্ধি, প্রযুক্তি ও পর্যটন শিল্পে মন্দা এবং যুদ্ধের বাজেটের চাপ ইসরায়েলি মধ্যবিত্ত ও পেশাদারদের জন্য পরিস্থিতি অসহনীয় করে তুলেছে।
ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সবচেয়ে বেশি অভিবাসন হয়েছে তেল আবিব এবং দখলকৃত ভূমির মধ্যাঞ্চলীয় এলাকা থেকে; অর্থাৎ সেই অঞ্চলগুলো যা ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত হৃদয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং অভিবাসীদের প্রধান গন্তব্যগুলো হল সেইসব দেশ যেমন গ্রীস, নেদারল্যান্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্য যা বেশি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রদান করে।
সামাজিক স্তরেও, হারেদি সম্প্রদায়ের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তাদের সামরিক সেবা থেকে অব্যাহতি ইসরায়েলের ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনকে তীব্র করেছে এবং এই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, বিপরীত অভিবাসন আজ টিকে থাকার ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং ইহুদিবাদী প্রকল্পের ভবিষ্যত মূল্যায়নের একটি নির্ধারক সূচকে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলের জনসংখ্যাগত ও রাজনৈতিক ভারসাম্য মৌলিকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৫