মুসলিম বিশ্বের বিপর্যয় ঠেকাতে ওআইসি যে কারণে নিষ্ক্রিয়
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i29002-মুসলিম_বিশ্বের_বিপর্যয়_ঠেকাতে_ওআইসি_যে_কারণে_নিষ্ক্রিয়
সিরিয়ার সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আলেপ্পো শহর মুক্ত করার প্রায় দশদিন পর সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দায় ‌ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬ ১৮:৫০ Asia/Dhaka
  • মুসলিম বিশ্বের বিপর্যয় ঠেকাতে ওআইসি যে কারণে নিষ্ক্রিয়

সিরিয়ার সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আলেপ্পো শহর মুক্ত করার প্রায় দশদিন পর সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দায় ‌ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ছয় বছর ধরে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চরম দুর্দশা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ  অবস্থা চলছে সিরিয়ায়। গত ছয় বছরে মুসলিম বিশ্বের সংকট সমাধানে ওআইসিকে কোনো ভূমিকাই পালন করতে দেখা যায়নি। এ কারণে ওআইসি'র লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হিসেবে ওআইসি মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানে আজ পর্যন্ত কোনো গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে কি? দ্বিতীয় প্রশ্ন, ওআইসি কেন মুসলিম বিশ্বে চলমান এতবড় বিপর্যয় ও শত্রুদের ষড়যন্ত্র রোধে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রয়েছে?

এসব প্রশ্নের অনেক উত্তরই রয়েছে। তবে ওআইসি'র নিষ্ক্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ  হচ্ছে, হাতে গোনা প্রভাবশালী কয়েকটি মুসলিম দেশের ইচ্ছে অনুযায়ী ওআইসি'র কর্মকাণ্ড পরিচালিত হওয়া। একমাত্র ইরান ও কিছুটা তুরস্ক ছাড়া আর কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের যেমন মূল্যায়ন হয়না তেমনি রাজনীতিতে জনগণের উপস্থিতি নেই এবং একটি সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারও অভাব রয়েছে। এসব মুসলিম দেশের শাসন কাঠামোতে আমির, রাজা-বাদশাহ কিংবা প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত স্বার্থের আলোকে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। জনগণের মতামতের কোনো মূল্য সেখানে নেই। অর্থাৎ বেশিরভাগ মুসলিম রাষ্ট্রে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। আর এইসব দেশের প্রতিনিধিরাই ওআইসিতে উপস্থিত এবং তারাই সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এ কারণে বিশ্বের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় ওআইসির কাছ থেকে গঠনমূলক কিছু পাওয়ার আশা করা যায় না।

যতদিন পর্যন্ত ওআইসি'র গঠন কাঠামোয় আরব রাজা বাদশাহদের প্রভাব বজায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই সংস্থা একটি নিষ্ক্রিয় ও অথর্ব সংস্থা হিসেবেই থাকবে এবং নির্যাতিত মুসলমানদের পরিবর্তে এটি কেবল আরব রাজা-বাদশাহদের স্বার্থই রক্ষা করবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে ভৌগোলিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে উঠে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যেই ওআইসি গঠন করা হয়েছিল। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের ৫৭টি মুসলিম দেশ নিয়ে ওআইসি গঠিত। এর মধ্যে ইউরোপের একমাত্র আলবেনিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের একমাত্র সুরিনাম ওআইসির সদস্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বহু সংস্থা বা জোটের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এসব জোটের কর্মকাণ্ড একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু এর বিপরীতে ওআইসি নির্দিষ্ট কোনো ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ না থাকায় এর সদস্যদের দায়িত্ব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠে সব মুসলিম দেশের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তেলসমৃদ্ধ কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো দেশ তাদের অঢেল সম্পদ ব্যবহার করে মুসলিম স্বার্থে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। এভাবে তারা নিষ্ক্রিয় অবস্থান থেকে ওআইসিকে বের করে আনতে পারে।# 

পার্সটুডে/মোঃ রেজওয়ান হোসেন/২৩