জারিফের বাগদাদ সফর
করোনার মধ্যেও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ইরাক
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের নেতৃত্ব একটি উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি দল গতকাল বাগদাদ সফর করেছেন। তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের উপায় নিয়ে ইরাকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
প্রথমে দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয়। এরপর জারিফ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল কাজেমিসহ দেশটির অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুদেশের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। প্রথমত, সকল ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সহযোগিতা জোরদারে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ইরাকের নতুন প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, শহীদ কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি গত ১ জানুয়ারি ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাগদাদ সফরে গিয়েছিলেন। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরপরই মার্কিন ড্রোন হামলায় তিনি শহীদ হন। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসা ইরাকের আধা সামরিক বাহিনী হাশদ আশ শাবি জোটের প্রধান আবু মাহদি আল মুহান্দেসসহ আরো আটজন ওই হামলায় শহীদ হন। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জারিফ বলেছেন, দুঃখজনকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব ব্যক্তিদের শহীদ করায় এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ইরান ও ইরাক আইএসসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর হুমকি মোকাবেলায় পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
তৃতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা হচ্ছে, ২০১৮ সালের মার্চে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ইরাক সফরের সময় আর্থ-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিস্তারের বিষয়ে যেসব সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে তা বাস্তবায়নের অবস্থা খতিয়ে দেখা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবারের বাগদাদ সফরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে দুদেশের জনগণের উন্নতির জন্য বিরাজমান সুযোগ সুবিধা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাগদাদ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী এ কথা উল্লেখ করে ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসেনও বলেছেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটলেও ইরাক ও ইরানের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা হচ্ছে, ইরাকসহ পশ্চিম এশিয়া জুড়ে আমেরিকার ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও এই অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি। ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর ও সেখান থেকে তার ইরানে আসার কথা রয়েছে। ঠিক তার আগ মুহূর্তে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাগদাদ সফর পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশগুলো ইরাক ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তারে চিন্তিত। আর তাই তারা নানা উপায়ে বাধা দেয়ারও চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাধা সত্বেও ইরান ও ইরাক যৌথভাবে এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারে বদ্ধপরিকর।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২০