ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত সামরিক মহড়া যে কারণে এতো গুরুত্বপূর্ণ: সতর্কাবস্থায় ইসরাইল
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো (গতকাল) থেকে যৌথ মহড়া শুরু করেছে। ফিলিস্তিনের ১২টি প্রতিরোধ সংগঠন এতে অংশ নিয়েছে। ফিলিস্তিনের সব প্রতিরোধ সংগঠন মিলে গাজায় তাদের এই প্রথম কোনো সামরিক মহড়া। মহড়া চলাকালে ড্রোন উড়ানোর পাশাপাশি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রতিরোধ সংগঠন এতে অংশ নিয়েছে তারা হচ্ছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস, ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলন, ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ফিলিস্তিনের গণ প্রতিরোধ কমিটি। এ ছাড়া আরো ছোট ছোট অন্যান্য সংগঠনও এ মহড়ায় যোগ দিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর যৌথ অভিযান পরিচালনাকারী সংগঠনের দফতর থেকে বলা হয়েছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে এ মহড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন সময়ের দিক থেকে এ মহড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ফিলিস্তিনিরা এমন সময় এ যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে যখন মার্কিন সমর্থন নিয়ে দখলদার ইসরাইলের সাথে কয়েকটি আরব দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই এ মহড়াকে ইসরাইল ও তার আরব মিত্রদের জন্য বিশেষ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে আর তা হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষায় জেগে উঠেছে। ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলনের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু হামজা বলেছেন, প্রতিরক্ষামূলক এ মহড়া ফিলিস্তিনি জাতিকে রক্ষার জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ।
ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রামীদের এ যৌথ সামরিক মহড়ার গুরুত্বের আরেকটি কারণ হচ্ছে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ আবারো দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আপোষ আলোচনায় বসা এবং ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই এই মহড়ার অন্যতম বার্তা হচ্ছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামীরা শুধু যে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনায় বসার বিরোধী তাই নয় একইসঙ্গে ইসরাইলের মোকাবেলায় নিজেদের প্রতিরোধ শক্তিকেও আরো জোরদার করতে চায়। এ ব্যাপারে আবু হামজা আরো বলেছেন, 'সম্মিলিত এ সামরিক মহড়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক। শত্রুর মোকাবেলায় আজকের প্রতিরোধ শক্তি আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে এবং আমরা শত্রুদেরকে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আর কোনো সুযোগ দেব না।'
ফিলিস্তিনিদের এ যৌথ মহড়ার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার শহীদ কাসেম সোলাইমানির শাহাদাত বার্ষিকী অতি সন্নিকটে। চলতি বছর ৩ জানুয়ারি জেনারেল সোলাইমানি, ইরাকের হাশদ আশ শাবির উপপ্রধানসহ আরো আটজন বাগদাদ বিমান বন্দরের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় শহীদ হয়েছিলেন। তাই মহড়ায় অংশ নেয়া ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা শহীদদের পথে চলা অব্যাহত রাখার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। তারা গাজার বিভিন্ন রাস্তায় শহীদ সোলাইমানির ছবি প্রতিস্থাপন করেছেন এবং তাতে লেখা রয়েছে 'সোলাইমানি হচ্ছেন বায়তুল মোকাদ্দাসের শহীদ'।
যাইহোক সবশেষে বলা যায়, ইসরাইলের তুলনায় যদিও সংগ্রামী ফিলিস্তিনিদের সামরিক শক্তি অনেক দুর্বল কিন্তু এ যৌথ সামরিক মহড়া এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ইসরাইলিদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। এ কারণে গাজায় এ মহড়া শুরুর সাথে সাথে ইসরাইল সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।#
- পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩০
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।