ইসরাইলের প্রতি নতুন মার্কিন সরকারের সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার!
ফিলিস্তিন ইস্যুটি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতার শিকার!: আরব লিগ প্রধানের বিলম্বিত বোধোদয়!
আরব লিগের মহাসচিব আহমাদ আবুলগেইত বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা গত চার বছরে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন চাপ ও কষ্টের শিকার হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও ইসরাইলের অবৈধ অস্তিত্ব নিয়ে সংকট সমসাময়িক যুগে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংকট। ইসরাইল দিনকে দিন ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করতে থাকায় ৫০'এর দশকের গোড়া থেকে সত্তুরের দশক পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে কমপক্ষে চারটি আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। সংগ্রামের পথ ছেড়ে দিয়ে ফিলিস্তিনের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের অনেকেই ইসরাইলের সঙ্গে আপোষ-রফা করায় প্রতিক্রিয়াশীল আরব শাসকদের কাছে ফিলিস্তিন ইস্যু অনেকাংশেই ম্লান হয়ে গেছে।
এই আরব সরকারগুলোর কোনো কোনোটি সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে তাদের গোপন সম্পর্ককে প্রকাশ্য রূপে নিয়ে এসেছে। গত রোববার আবুধাবিতে খোলা হয়েছে ইসরাইলি দূতাবাস ও আমিরাত সরকারও শিগগিরই তেলআবিবে তার দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে। ইসরাইলের সঙ্গে আপোষকামী এইসব আরব সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণকে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থের প্রতি পেছন থেকে ছুরিকাঘাত বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সাবেক মার্কিন সরকার গত চার বছরে ফিলিস্তিনের ওপর অনেক আঘাত হেনেছেন! জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দু হাজার তিনশ চৌত্রিশ নম্বর প্রস্তাব উপেক্ষা করে এই সরকার অধিকৃত অঞ্চলে ইসরাইলি বসতি প্রতিষ্ঠাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এমনকি দুই রাষ্ট্র-ভিত্তিক সমাধানের নীতির কথা যা মার্কিন সরকারগুলো সব সময় বলে আসতো তাও পদদলিত করেছে।
ট্রাম্প সরকারের কথিত ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বা শতাব্দির লেনদেন শীর্ষক মার্কিন পরিকল্পনা কার্যত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডকে আরও ছোটো করে দিয়েছে এবং মুসলমানদের প্রথম কেবলা আলকুদসকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন তেলআবিব থেকে তার রাজধানী এই কুদ্স্-এ সরিয়ে এনেছে। কয়েকটি সেবাদাস আরব সরকারও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফিলিস্তিনি জাতির বিরুদ্ধে মার্কিন ও ইসরাইলি লক্ষ্যগুলো অর্জনে ব্যাপক সেবাদাসত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছে!
আরব লিগের মহাসচিব আহমাদ আবুলগেইত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে স্বীকার করেছেন যে ফিলিস্তিনি ইস্যুটি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইস্যুটির ব্যাপারে ভারসাম্যহীন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতকে কেবল ইসরাইলি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে! আর ব্যাপারটা এমন যেন দখলদারিত্বের শিকার ফিলিস্তিন বলতে যেন কিছুই নেই অথবা ফিলিস্তিনিদের এটা বলা হচ্ছে যে তাদের ওপর যা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা যেন তারা মেনে নেয়!
আহমাদ আবুল গ্বাইত আরও বলেছেন, নতুন মার্কিন সরকারের কাছে আমাদের আবেদন ওয়াশিংটন যেন ফিলিস্তিন বিষয়ে তার নীতি সংশোধন করে ও ফিলিস্তিনি জাতিকে এ আশা যোগায় যে বিশ্ব সমাজ ফিলিস্তিনি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রামের সঙ্গে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আচরণ করবে!
নতুন মার্কিন সরকারের ফিলিস্তিন সংক্রান্ত নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা তা স্পষ্ট নয় তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সিনেটের পক্ষ থেকে তার মন্ত্রিত্ব অনুমোদন পাওয়ার পরপরই ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি অ্যাশকেন'জি'র সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সরকারের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছেন!
আরব লিগ যদি আশা করে যে মার্কিন সরকার ফিলিস্তিনি জাতির সমর্থনে এগিয়ে আসবে তাহলে তা হবে মারাত্মক বিভ্রান্তি। তাই মার্কিন সরকারের নয় বরং আরব সরকারগুলোর ও আরব সংস্থাগুলোর সহায়তাই ফিলিস্তিনের জন্য বেশি জরুরি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আবুল গ্বাইতের নেতৃত্বাধীন আরব লিগ ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইন ও আরব আমিরাতের চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখতেই সক্ষম হয়নি! #
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।