ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত সরকার শান্তি আলোচনার জন্য তিনটি শর্ত দিয়েছে
(last modified Thu, 10 Jun 2021 12:50:21 GMT )
জুন ১০, ২০২১ ১৮:৫০ Asia/Dhaka

ইয়েমেনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পরিষদ সেদেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব এবং যুদ্ধ অবসানের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে আসন্ন শান্তি আলোচনার জন্য তিনটি মৌলিক নীতি বা প্রস্তাব ঘোষণা করেছে।

এই পরিষদ আলোচনার ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট নীতি অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেছে, ইয়েমেনের জনগণের ন্যায্য অধিকার রক্ষা এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে। পরিষদ আরো বলেছে, আসন্ন  আলোচনায় তাদের তিনটি নীতিকে কোনভাবেই উপেক্ষা করা চলবে না। এই তিনটি নীতি বা শর্ত হচ্ছে প্রথমত, ইয়েমেনের ওপর থেকে সমস্ত অন্যায় নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আকাশ, নৌ ও স্থলপথে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং তৃতীয়ত, দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে ইয়েমেনের ভূখণ্ড থেকে সমস্ত বিদেশি সেনাদেরকে চলে যেতে হবে।

ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অভিযান ৭৫ তম মাসে গিয়ে পড়ল। এই আগ্রাসনের ফলে ইয়েমেনের ১৭ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে নিহত এবং আরো হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে এক লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে প্রাণ হারিয়েছে। চলতি শতাব্দীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ইয়েমেনে। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এ অবস্থায় ইয়েমেনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পরিষদ গঠনমূলক আলোচনার স্বার্থে যে তিনটি শর্তের কথা জানিয়েছেন তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা শুধু যে যুদ্ধের কারণে সরাসরি এই ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে তাই নয় একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ সম্প্রতি এক ভাষণে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইয়েমেনে যুদ্ধ অবসানের চেষ্টা করছে কিন্তু একই সাথে দরিদ্র এ দেশটির বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখারও চেষ্টা করছে। কিন্তু ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুথি সমর্থিত ন্যাশনাল সালভেশন সরকারের দৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিয়ে আগ্রাসন বন্ধের কোনো মানেই হয় না।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ

ইয়েমেনিদের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, যে কোনো আলোচনায় ওই দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

কেননা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত হামলা চালিয়ে ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গা এখনও দখল করে আছে যা কিনা এ দেশটির সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায় দখলদার সেনাদের ইয়েমেন ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া যুদ্ধ অবসানের কোন মানেই হয়না। এছাড়া সৌদি আরব ও তার মিত্ররা ইয়েমেনকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার যে ষড়যন্ত্র করছে ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল সালভেশন সরকার তীব্র ভাষায় এর বিরোধিতা করেছে এবং দেশের জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, যুদ্ধের ময়দানে ইয়েমেনের যোদ্ধারা সৌদি আরবকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। ইয়েমেনিদের হামলায় সৌদি আরবের বহু সেনা নিহত হয়েছে এবং সামরিক ঘাঁটি হাত ছাড়া করেছে। এমনকি ইয়েমেনিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে সৌদি আরবের গভীরে হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সৌদি সরকার একদিকে অভ্যন্তরীণ প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে অন্যদিকে ইয়েমেনিদের আরো সামরিক হামলার আশঙ্কায় সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে আছে। ইয়েমেনের ন্যাশনাল সালভেশন সরকার যদিও আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরবই এক্ষেত্রে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কা বুঝতে পেরে সৌদি সরকার আলোচনার কৌশল নিয়েছে যাতে তারা বিজয়ের অবস্থান ধরে রাখতে পারে কিন্তু ইয়েমেনের ন্যাশনাল সালভেশন সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছে।

মোটকথা, ইয়েমেনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টিকে সালভেশন সরকার সবচেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং বর্তমান যু্দ্ধে তাদের ভালো অবস্থান তাদের সে লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করছে। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১০