তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট:
তুরস্কে নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি: ফুঁসে উঠছে জনরোষ
গত বারো মাসে তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতি শতকরা ৮৪ ভাগের বেশি বেড়েছে। তুরস্কের সরকারি পরিসংখ্যান ও তথ্য সংস্থা এই তথ্য দিয়েছে। তবে তুরস্কের বেসরকারি অর্থনৈতিক সংস্থা ই.এন.এ.জি. বলেছে বিগত বারো মাসে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে শতকরা ১৭০.৭ ভাগ।
বিগত ২ বছর ধরেই তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ রুটি কিংবা তেলের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দামই বেড়েছে শতকরা অন্তত ৩০০ ভাগ। ২০১৮ সাল থেকে ধীরে ধীরে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। প্রায় চার বছরের মাথায় ওই সংকট নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে যেমন ধ্বস নেমেছে তেমনি বেকারত্বও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। যার ফলে তুরস্কের স্থানীয় মুদ্রা লিরার মূল্যের ব্যাপক পতন হয়েছে। অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। স্বাভাবিকভাবেই তুরস্কের ক্ষমতাসীন রজব তাইয়্যেব এরদোগানের নেতৃত্বাধীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সেদেশের জনগণ। ওই সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০ বছরে অর্থনৈতিক যে ইতিবাচক ও গঠনমূলক উন্নয়ন হয়েছিল তা পরবর্তী ১০ বছরে ম্লান হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য অর্থনৈতিক সূচক ২০০২ সালের চেয়েও নিম্নস্তরে নেমে গেছে। এ কারণে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সমর্থকেরাও বর্তমান সরকারের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে বিরোধী পক্ষে যোগ দিয়েছে।
আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি 'ফিচ' গত বছরের গ্রীষ্মে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৫০ সাল থেকে তুরস্কে এত বেশি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর আর কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রেসিডেন্ট ছিল না। এতো বেশি ক্ষমতার কারণে সরকারের আইন ও বিভিন্ন বিভাগে বিশেষ ব্যক্তির নীতিগত প্রভাব পড়েছে। ফলে সেইসব প্রতিষ্ঠান কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তুর্কি অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন: তুরস্কে বাদশাহর মতো বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবির প্রয়োজন। তবে একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে এরদোগানের শাসনের প্রথম দশকে তুরস্কের অর্থনীতিতে ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে আন্তর্জাতিক বহু ফোরামে তখন তুরস্ককে স্বাগত জানানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের ২০টি শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-টুয়েন্টি থেকেও যদি তুরস্ককে বাদ দেওয়া হয় তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।#
পার্সটুডে/এনএম/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।