ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩ ১৩:৩৯ Asia/Dhaka

আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৫ সদস্য এই ইউনিয়নের সদস্যদেরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং তেল আবিব সরকারকে একটি ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে অভিহিত করার আহ্বান জানিয়েছে। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদ সদস্যরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে ইহুদিবাদী শাসকদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আফ্রিকান ইউনিয়নের ঘোষণায় বলা হয়েছে, সদস্য দেশগুলো ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর  অবৈধ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না যেটি অধিকৃত পূর্ব কুদসসহ অধিকৃত ফিলিস্তিন ও আরব ভূখণ্ডে উপনিবেশবাদী ও বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। আমরা সদস্য দেশগুলোকে ইহুদিবাদী শাসকদের সঙ্গে  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, বাণিজ্যিক বিনিময় বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যদিকে জাতিসংঘের ঘোষণার ভিত্তিতে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য এসব ব্যবস্থা প্রয়োগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কারের পর এই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এই অনুরোধটি এসেছে। গত সপ্তাহে আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ইহুদিবাদী শাসকদের প্রতিনিধি দলকে বহিষ্কার করেছিল। শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে তারা তেল আবিব থেকে আদ্দিস আবাবায় এসেছিল। ইহুদিবাদী শাসকের প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করা প্রমাণ করে যে এই শাসক গোষ্ঠী কেবল আফ্রিকান ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক সদস্যপদ হারাতে যাাচ্ছে না বরং এর বিপরীতে এই প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করার মাধ্যমে প্রমাণ করে যে দখলদার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে সেখান থেকে এক প্রকার গলা থাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। এদিকে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী আফ্রিকা ইউনিয়নের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও আলজেরিয়াকে কূটনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করেছে। 

আফ্রিকান ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে যে ইহুদিবাদী শাসক তাদের প্রতিনিধিদলের বহিষ্কারের ঘটনাকে মর্মান্তিক বলে যে আখ্যা দিয়েছে সেটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ এর আগে আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের বৈঠক থেকে ইহুদিবাদী প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কারের পর এই ইউনিয়নের কমিশন ইহুদিবাদী শাসকের প্রতিনিধিকে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য যে কোনও আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিল।

আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের প্রধান মুসা ফাকি মোহাম্মদ বলেছেন, আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রধানদের গত বছরের বৈঠকে ইউনিয়নে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসাবে ইসরাইলের মর্যাদা স্থগিত করা হয়েছিল এবং এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি তারা জোর দিয়ে বলেছেন, যতক্ষণ এই কমিটি এই বিষয়ে আলোচনা করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি মুলতুবি থাকবে। তাই আমরা আমাদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ইহুদিবাদী সরকারের কোনো কূটনীতিককে আমন্ত্রণ জানাইনি।

আফ্রিকান ইউনিয়ন নেতাদের ৩৬ তম বৈঠক আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল যখন কয়েকটি দেশ পর্যবেক্ষক সদস্য হিসাবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সদস্যপদ বাতিল করার দাবি করেছিল। এছাড়াও আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য আফ্রিকান ইউনিয়নের সমর্থনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদ সাদেক বলেছেন, আফ্রিকান ইউনিয়নের কিছু সদস্য ইহুদিবাদী শাসকের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে। ইহুদিবাদী শাসক  দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে আসছে। পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সদস্যপদে সম্মত হলেও বর্ণবাদের শিকার আলজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এই বিষয়ে তারা তীব্র আপত্তি জানায়। এই পরিস্থিতিকে তারা নিজেদের জন্য অপমান হিসেবে দেখেছে।

এখন, ইহুদিবাদী শাসনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে আফ্রিকান ইউনিয়নের ৫৫টি দেশের সম্মিলিত অবস্থানের ঘোষণা,  ইহুদিবাদী শাসনের ব্যাপক তৎপরতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আফ্রিকা মহাদেশে একটি শক্তিশালী ইহুদিবাদী বিরোধী পরিবেশের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুদান এবং মরক্কোর মতো দেশগুলির সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পাশাপাশি আফ্রিকান প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশেষ করে আফ্রিকান ইউনিয়নে উপস্থিতির মাধ্যমে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী আফ্রিকার দেশগুলোকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল।

কয়েক দশক ধরে ইহুদিবাদী শাসক আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে এসে আফ্রিকার দেশগুলোর সম্পদ ও  সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা করার পাশাপাশি এই মহাদেশে নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র অনেক চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সুদান ও মরক্কোকে ইহুদিবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাধ্য করেছে। এরপর ইহুদিবাদী শাসক আফ্রিকায় নিজেদের উপস্থিতি ও প্রভাব বিস্তারের পথ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে তারা আফ্রিকান ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক সদস্যে মর্যাদা লাভ করে। যাইহোক আলজেরিয়ার নেতৃত্বে আফ্রিকান দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ আফ্রিকার বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান আফ্রিকান ইউনিয়নে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পর্যবেক্ষক সদস্যপদ বাতিল করতে চায়। আফ্রিকান ইউনিয়নের এ সিদ্ধান্তকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য একটি বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ