মে ২৯, ২০২৩ ১২:৪৮ Asia/Dhaka

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো কিংবদন্তী প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি অধিকৃত ফিলিস্তিনে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের নানা অপরাধযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার জন্য এখন অন্যান্য দেশের কার্যকরী সমর্থন প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম রক্ষক এবং নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ওলিউ লেইলা ম্যান্ডেলা আমেরিকার বেশ কয়েকটি বড় শহরে তার সফরের প্রাক্কালে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসন প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে বড় ধরনের সমাবেশ করতে চলেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য বাস্তবিক এবং কার্যকরী সমর্থন প্রয়োজন।

গত কয়েক দশকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ বিশেষ করে ১৯৬৭ সালে দখলকৃত এলাকাগুলো সবসময়ই জাতিগত বিচ্ছিন্নতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ করার জন্য এই সরকার অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। পশ্চিম তীরের অনেক অংশে  প্রাচীর এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে আরও জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

গাজা উপত্যকার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের নৃশংস হামলা এবং নারী ও শিশুদের হত্যা, ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ও বাড়িঘর ধ্বংস, কিছু এলাকায় সর্বাত্মক অবরোধ এবং বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের মতো কাজগুলোকে ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠীর অপরাধযজ্ঞ হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে।  জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্ণিত কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নিরবতায় ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে।

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধের বিস্তৃতি এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে সমস্ত গোপনীয়তা এবং রাখঢাক সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইহুদিবাদী শাসনকে বর্ণবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছিল।  "ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আধিপত্য ও নৃশংস দমন ব্যবস্থা" শিরোনামে এই মানবাধিকার সংস্থার ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের সাথে একটি নিকৃষ্ট অ-ইহুদি জাতিগত গোষ্ঠী হিসাবে আচরণ করে আসছে এবং ইহুদি জনসংখ্যাগত আধিপত্য ও দখলারিত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি  ইহুদি ইসরাইলিদের সুবিধার জন্য ফিলিস্তিনিদের জমির উপর তেল আবিব শাসকগোষ্ঠী তার নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ মাত্রায় বজায় রাখার একটি সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করছে।

ফিলিস্তিনি মানবাধিকার কর্মী নর্দান কিসওয়ানিক বলেছেন, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী সম্পর্কে "বর্ণবাদ" শব্দটি ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয় বরং এরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে "স্থায়ী উপনিবেশবাদী" নীতি চাপিয়ে দিয়েছে এবং ধীরে ধীরে সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায়।

ইহুদিবাদী শাসন মূলত একটি বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা এবং ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করার সময় ইহুদিরা নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ দাবি করে ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করছে। অধিকৃত অঞ্চলে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মিডিয়াতে এই অপরাধযজ্ঞের কিছু স্থিরচিত্র নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর বর্ণবাদী নীতির নিন্দা করতে বাধ্য করেছে। এই বিষয়ে আফ্রিকান দেশগুলো যারা কয়েক দশক ধরে ঔপনিবেশিকতা এবং বর্ণবাদের স্বাদ ভোগ করেছে এবং একটি বেদনাদায়ক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে অতীতের জীবন পার করেছে তারা  ইহুদিবাদীদের বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের মোকাবিলা করতে স্বাধীন ও আধিপত্যবাদ বিরোধী দেশগুলোর সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বরাবরই ফিলিস্তিনি জাতির ন্যায্য অধিকারকে সমর্থন করেছিলেন এবং অধিকৃত অঞ্চল থেকে ইহুদিবাদী শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ওলিউ লেইলা ম্যান্ডেলাও বারবার জোর দিয়ে বলেছেন: আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশে আছি। তাদের ইচ্ছা আকাঙ্খা আমাদের ইচ্ছা আকাঙ্খা এবং তাদের স্বাধীনতা আমাদের স্বাধীনতা।

হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ওয়াসি আবু মারজুক এ প্রসঙ্গে বলেছেন: দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবাদ ও বর্ণবাদের শাসনের জাতাকলে ভুগেছে। ফলে তারা ফিলিস্তিন জাতির কষ্টে তারা তাদের হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। পরিশেষে এরই ধারাবাহিকতায় ম্যান্ডেলার নাতি ইসরাইলের বর্ণবাদ আচরণের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধজ্ঞ মোকাবিলায় অন্যান্য স্বাধীন দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।#

পার্সটুডে/এমবিএ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ